মূকাভিনেতা নিথর মাহবুব
মাসুম বিল্লাহ || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:২৮ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২১ বুধবার

বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন মূকাভিনয় শিল্পী। এছাড়াও তিনি মঞ্চ ও টিভি নাটকের অভিনেতা। চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, গানের মডেলিং এ ও অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘শিখন্ডি কথা’ তার অভিনীত প্রধম ধারাবাহিক নাটক জুয়েল মাহমুদ পরিচালিত ‘ললিতা’, অভিনিত প্রথম বিজ্ঞাপন ‘বাংলালিংক হেল্থ লিংক’, প্রথম গানে মডেল হয়েছেন ক্লোজাপ ওয়ান তারকা রাজীব এর ‘জেগে উঠো’ গানে। তার অভিনীত সর্বাধিক ভিউর নাটক আরএইচ সোহেল পরিচালিত ‘কালো জামাই’। পেশায় নিথর মাহবুব একজন সাংবাদিক। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক তিনি। মঞ্চে নিয়মিত মূকাভিনয় প্রদর্শণী ছাড়াও ৯টি স্ববাক মঞ্চ নাটকের শতাধিক প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন নিথর মাহবুব। মূকাকু ও বজলু চোর তার অভিনীত আলোচিত দুটি চরিত্র। তিনি প্রথমদিকে একক মূকাভিনয় পরিবেশন শুরু করলেও বাংলাদেশে মূকাভিনয়ের প্রচার ও প্রসারের লক্ষে গড়ে তোলেন একটি দলীয় মূকাভিনয়ের সংগঠন মাইম আর্ট। পরিচিত এ মূকাভিনয় শিল্পী শুধু মঞ্চ নাটকেই মূকাভিনয় নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। তিনি মূকাভিনয়কে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা দেশে। মূকাভিনয় করেছেন গানে, টেলিভিশন নাটকেও।
নিথর মাহবুবের জন্ম ১৮ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ভিটি কলাগাছিয়া গ্রামের মোল্লাবাড়িতে। বাবা কদরুজ্জামান মোল্লা ও মা মাস্তুরী চৌধুরীর সন্তান নিথর মাহবুব তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোটকাল থেকে শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ অনেক ছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি সাঙ্স্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে তার প্রতিভা দিয়ে নিথর মাহবুব নামকে উজ্জ্বল করে তোলেন। মিডিয়া অঙ্গনে তিনি নিথর মাহবুব নামে পরিচিত হলেও পারিবারিকভাবে ও শিক্ষার দলিল দস্তাবেজে তিনি পরিচিত মুহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান মোল্লা নামে।
তিনি প্রথম পড়াশোনাশুনা করেন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শুরু পূর্ব ধোলাইপাড় ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। এরপর পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত দনিয়া একে উচ্চবিদ্যালয়ে। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণী নরসীংদি রাজাদ্দী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণী সদাসদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই পরবর্তীতে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা আরকে চৌধুরী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও নরসিংদী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন।নরসিংদী জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে তিনি চার বছর মেয়াদী রবীন্দ্রসঙ্গীত কোর্স করেছেন। নরসিংদী সরকারি কলেঝে পড়ার সময় তিনি সমমনা কয়েকজনের সঙ্গে মিলে ওখানে ‘নাট্যশীলন’ নামে নাটকের দল গঠন করে সেখানে নাট্য চর্চা শুরু করেন। ২০০২ সালের দিকে তিনি স্খায়ী ভাবে ঢাকায় চলে আসেন এবং যুক্ত হন স্বপ্নদল নাট্য সংগঠনের সঙ্গে। এই মধ্যে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে বিভিন্ন কর্মশালা করে এবং বিভিন্ন নাটকের সংগঠনের সাথে কাজ করে নিজের অভিনয়ের দক্ষতা বাড়াতে থাকেন। ২০০৭সালে যুক্ত হন নাটকের সঙ্গঠন নাটুকে থিয়েটারে। নাটুকে থিয়েটারে কাজের সুবাদে পরিচিত হন কিংবদন্তি মূকাভিনয় শিল্পী পার্থ প্রতিম মজুমদারের সাথে। এরপর ধীরে ধীরে তার সাথে আন্তরিকতা ও সখ্যতা গড়ে ওঠে।
২০০৮ সালে মূকাভিনয়কে ছড়িয়ে দিতে তিনি দলীয়ভাবে গড়ে তোলেন মূকাভিনয় এর সংগঠন মাইম আর্ট। বর্তমানে তিনি এর প্রধান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। মূকাভিনয়ের বাইরে তার অভিনিত মঞ্চনাটকের মধ্যে আছে মধ্যে আছে স্বপ্নদলের ‘ডাকঘর’, নাটুকে থিয়েটারের ‘তমসা’, ‘নাউ ইউ সি উট’, ‘বিয়ে বিরম্বনা’, জেনেসিস থিয়েটারের ‘দামাল ছেলে নজরুল’, শব্দ নাট্য চর্চা কেন্দ্রের ‘রাজা সাহিত্য কারখানা’ নিখাদ এর ‘চন্দ্রমুখী’, দৃশ্যকাব্যের ‘বাঘ’ ইত্যাদি। অীভনয়ের বাইরে বিভিন্ন নাটকের দল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিনয় ও মাইমের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। ব্র্যাক পরিচালিত সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাইম প্রকল্পের তিনি প্রধান রিসোর্স হিসেবে কাজ করেছেন।সেখানে তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েই শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের মূকাভিনয় শেখাচ্ছে।