ল ইয়ার্স রিক্রিয়েশন ক্লাব ও রাস্তাপারের চায়ের দোকান
মোস্তফা করিম || আইনজীবী ও সাংবাদিক ১০:২৪ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

সেটা ১৯৭৫/৭৬ সনের কথা। তৎকালীন গ্রীন্ডল্যাজ ব্যাংক যা হালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এই ব্যাংক সংলগ্ন উত্তর দিকের খালি জায়গায় পৌরসভার প্রশস্থ ড্রেনের উপর কংক্রিটের স্লাবের উপর এক কোনে ছুটির সময়ে চা বানিয়ে কিছু উপরি আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তখনকার ব্যাংক ম্যানেজার প্রয়াত দয়ালু শাহ আলম খন্দকার তাঁর এক স্বল্প আয়ের চাকুরে সিকিউরিটি গার্ড নোয়াখালীর আবুল কাশেম কে। কাশেম সুযোগ বুঝে ছোট্ট চায়ের দোকান শুরু করে দিল সেই তখন থেকেই।
শর্তাধীন সুযোগ। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অফিস সময়ের আগে ও পরে সে এ ব্যবসা চালিয়ে সংসারের জন্য অতিরিক্ত আয় করতে পারবে কাসেম। কিন্তু ডিউটি চলাকালীন সে নিজে কোনভাবেই দোকান চালাতে পারবে না। সে থেকেই তার চায়ের দোকানের গোড়াপত্তন।
বোস কেবিন, সালমা কেবিন, আলম কেবিন, মনির হোটেল, দরবার হোটেল আর মজিবর হোটেল ছিল তখন নারায়ণগঞ্জবাসীর চা খাওয়ার ও আড্ডা মারার জায়গা। কিন্তু এতে মারাত্মক অসুবিধার কারণ হয়ে দেখা দেয় তৎকালীন কিছু ডায়াবেটিক রোগীর। এরা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নগরের সিনিয়র সিটিজেন।
ওঁনাদের প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন ছিল প্রত্যুষে হাঁটাহাটির পর সুগার ফ্রি চা নাস্তা করা। কিন্তু অত সকালে কোন হোটেলে চা নাস্তা তৈরি হতো না বিধায় ওইসব সিনিয়র সিটিজেনগণ কাসেমের দোকানে বসে চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে ডায়াবেটিক রোগী হিসেবে সকালের প্রাথমিক কর্মটি সম্পাদন করে নিতেন।
আমার মা ডায়াবেটিক রোগী হওয়ার কারণে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন সাথে আমি থাকতাম কম্বলসারি। হাঁটাহাটির পর্ব শেষ হতেই মায়ের প্রচন্ড ক্ষুধা পেত। আবার তাঁর ছিল প্রচন্ড চায়ের নেশা। ফলে তিনি প্রতিদিনই কাসেমের চায়ের দোকানে চা টোস্ট বিস্কুট নিয়মিত খেতেন। আবার কাসেমও মাকে স্পেশাল চা বানিয়ে দিত শাহ আলম খন্দকার এর বোন বলে। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় রেডিওতে বাংলা খবর শুনে আমরা স্থান ত্যাগ করতাম।
কাসেমের চায়ের দোকানে তখন নিয়মিত দেখা যেত প্রয়াত রাজনীতিক শফি হোসেন খান, আফজাল হোসেন, আবদুল গফুর, শেখ মিজানুর রহমান, লিলু মল্লিক, আবদুল হামিদ, আলী আহমদ চুনকা, লতিফুর রহমান, খলিলুর রহমান, আবদুস সাত্তার, মোহর আলি চৌধুরী, মন্টু ঘোষ, রথীন চক্রবর্তী, বেনজির আহমেদ, চেংগিস, আবদুস সবুর সেন্টু প্রমুখকে।
এখন কাসেমের চায়ের দোকান পরিনত হয়েছে মোহামেডান টি স্টল হিসেবে। ব্যাংক ম্যানেজার শাহ আলম কাকার শর্তানুসারে পর্যায়ক্রমে ফুলটাইম দোকান পরিচালনা করতে কাসেম গ্রাম থেকে ছোট দুই ভাই কাউসার ও বাদশাকে এখানে নিয়ে আসে। বাদশা কিছুদিন দোকানদারি করলেও কাউসার এখনও টিকে আছে।
কাউসারের আদব কায়দা ভাল হওয়ার কারণে কিছু ভাল মানুষ এখনও এই টি স্টলে আসে চা বিস্কুট খায় আর সময় কাটায়। যার মধ্যে কিছু আইনজীবীও রয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শাহিন, হাসান ফেরদৌস জুয়েল, মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া, আলি আহমদ, জালাল আহমেদ, নারায়ণ, জাহিদুল হক ভুইয়া, জিয়াউল হক, অমিতাভ সরকার, শরত মন্ডল, কাউসার আলি শেখ প্রমুখ আইনজীবী ।
২১ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে তাদের এক সভায় প্রশ্ন করে বলেছেন আইনজীবীরা কেন রাস্তার পাড়ে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারবে চা খাবে? তিনি আইনজীবীদের জন্য রিক্রিয়েশন ক্লাব বা সেন্টার করে দেয়ার যে উদ্যোগের কথা বলেছেন তা মোটেই অযৌক্তিক নয়। বরং আইনজীবীদের ভাবমূর্তি ও স্ট্যাটাস রক্ষায় এই ধরনের ক্লাবের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এটা কোন হাসি ঠাট্টা তামাশা বা উপহাস করার বিষয় নয় বরং সময়োপযোগী প্রস্তাব।