নারায়ণগঞ্জে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে
স্টাফ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:২২ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

দুই মাসেই বিনিয়োগ কমলো ৪ কোটি টাকা। চিত্রটা হতাশার ঘর ছাড়াতে পারে। চলতি অর্থবছরের দুই মাসেই গতবছরের চেয়ে ৪ কোটি ১ লাখ টাকার কম সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মুনাফার হার কমে যাওয়ায় প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ জেলায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৫৬৩ জন। এ খাতে তিন মাসের বিনিয়োগের চিত্র হতাশাজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগের এমন শ্লথগতি দেখে সংশ্লিষ্টরা প্রমাদ গুণছেন।
একজন সিনিয়র ব্যাংকার মনে করেন, আমাদের দেশের মধ্যবিত্তদের যে কয়েকটি বিনিয়োগের ক্ষেত্র ছিল তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মধ্যবিত্তরা তাদের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতো। এখন সেখানেও কমে যাচ্ছে মুনাফার হার। অন্যদিকে, মানুষ যে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবে এবং সেই টাকা ফেরত পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাহলে মানুষ কোথায় বিনিয়োগ করবে ? এ ব্যাপারে সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক বলেন, এটা সরকার করেছে। এর প্রভাব কী হবে তা কিছুদিন পরে বোঝা যাবে। আসলে সঞ্চয়পত্রের পেছনে সরকারকে প্রচুর টাকা সুদ দিতে হচ্ছে। মূলত সুদের এ বোঝাটা কমানোর জন্যই সরকার হয়তো এ পথে হেঁটেছে।
জানাগেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মোট ১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৪৯ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পেনসন সঞ্চয়পত্র ৬২ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মোট ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২১৫ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পেনসন সঞ্চয়পত্র ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মোট ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৫৪ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। পেনসন সঞ্চয়পত্র ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৪ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মোট ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৫৮ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। পেনসন সঞ্চয়পত্র ২ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সঞ্চয় ব্যুরোর তথ্য প্রমাণ করছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য এক সময় নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রটিতে দিনে দিনে বিনিয়োগ কমছে । বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র নিয়ে কেউ আর স্বস্তিতে নেই। ক’বছর আগেও জেলা সঞ্চয় ব্যুরোর মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের কাছাকাছি। অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পর কমে যেতে শুরু করেছে। বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১২ হাজার ৩‘শ জন। এরমধ্যে অনলাইন গ্রাহক ৪ হাজার ৩‘শ জন। আগের ম্যানুয়েল সিস্টেমের গ্রাহক সংখ্যা ৮ হাজার।
জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আলম অবশ্য বলেছেন, মুনাফা কমে যাওয়ার প্রভাবটা নারায়ণগঞ্জে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এখানে বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারীর সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৫৬৩ জন।
চলতি অর্থবছরে (২০-২১) নারায়ণগঞ্জ জেলা সঞ্চয় অফিসের সঞ্চয়পত্র বিক্রির টার্গেট ছিল ১৮০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৭৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২ হাজার ৪‘শ ২৮ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৯০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। পেনসন ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির টার্গেট ছিল ১৪৬ কোটি টাকা। বিক্রি হয়েছে ৯৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৩ জন। পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তিনমাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পাঁচবছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। পেনশন ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।
একজন ব্যাংকার বলেন, ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের আলাদা আলাদা মুনাফার হার। সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বেশি। ফলে যাদের টাকা ছিল তারা বিনিয়োগ করতো সঞ্চয়পত্রে। এখন যদিও মুনাফার হার কমিেিয়ছে তবুও মার্কেটে অন্যখাতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বেশি। এর যে প্রভাব পড়তে পারে, তা হল মানুষ কম সঞ্চয়পত্র কিনলে সরকার কম লোন পাবে। সরকার তো এমনিতেই অন্য জায়গা থেকে এর চেয়ে কম মুনাফায় লোন পাচ্ছে। এছাড়াও, সরকার আমাদের দেশের ব্যাংক থেকেও কম মুনাফায় লোন পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে মানুষ যে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করবে তার ভরসা পাচ্ছে না। শেয়ার বাজারে মানুষ বিনিয়োগ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে।