ড্রেস তৈরীতেই ‘অর্ধশতকোটি’ টাকা
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:৩০ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে আজ থেকেই খুলছে নারায়ণগঞ্জের ৮৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস আর কাজে আসছে না। এ কারণে ছুটতে হচ্ছে দর্জির দোকানে। নারায়ণগঞ্জের মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর নতুন করে বানাতে হচ্ছে স্কুল ড্রেস। এর সাথে প্রাথমিক স্তরও রয়েছে। কেবলমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস বানাতে খরচ হবে কমপক্ষে ৩৫কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। এদের অর্ধেকও যদি ড্রেস তৈরী করে তাহলে খরচ হবে কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের সবমিলিয়ে খরচ হবে ৫১ কোটি টাকা। এই বিপুল অংকের টাকা যুক্ত হবে নারায়ণগঞ্জের অর্থনীতিতে। ফলে, অনেকদিন পর অর্থনীতির চাকা কিছুটা হলেও সচল হবে।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ছিট কাপড়, দর্জি ও জুতার দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অভিভাবকদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তারা তাদের সন্তানদের স্কুল ড্রেস বানাতে পার করছেন ব্যস্ত সময়। কাপড়, দর্জি ও জুতার দোকানেও ব্যস্ততা বাড়ার কারণ এটাই।
গলাচিপার হাসান টেইলার্সের মালিক মোঃ হাসান আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে স্কুল ড্রেস এর অনেক অর্ডার পেয়েছি। স্কুল খোলার দিনই আজ অনেকগুলো অর্ডার ডেলিভারী দেয়ার কথা।
একজন ছেলে শিক্ষার্থীর ড্রেস বানাতে ১২ ‘শ টাকা লাগছে বলে জানালেন তিনি। বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গড়ে ৬/৭‘শ টাকার কাপড় কিনতে হচ্ছে। আর মজুরি দিতে হচ্ছে ৬‘শ টাকা। শার্ট-প্যান্টে খরচ হচ্ছে ১২/১৩ ‘শ টাকার মত। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জামা ও পায়জামা বানাতে গড়ে ৮‘শ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান হাসান আহমেদ। এরমধ্যে ৪‘শ টাকার কাপড় ও ৪‘শ টাকা মজুরি।
জেলা শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে ২ লাখ ২৪ হাজার ২০৩ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৯৬০ জন রয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থী। অভিভাবক সূত্রে জানাগেছে, এসব শিক্ষার্থীকে তৈরী করতে হচ্ছে নতুন ড্রেস। ১ লাখ ৩ হাজার ৪০জন ছেলে শিক্ষার্থীর শার্ট-প্যান্ট বাবদ ১২ ‘শ টাকা হিসেবে ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর ৮ ‘শ টাকা হিসেবে ১ লাখ ২০ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থীর ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকার জামা-পায়জামা বানাতে হবে। সবমিলিয়ে ২ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর পোষাক তৈরী করতে খরচ হবে ২২ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্রাথমিক স্তরে জনপ্রতি নতুন ড্রেস তৈরীতে খরচ হবে ৮‘শ টাকা। প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর অর্ধেক অর্থাৎ ২ লাখ শিক্ষার্থীও যদি নতুন ড্রেস তৈরী করে তাহলে খরচ হবে ১৬ কোটি টাকা।
পোষাকের পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কিনতে হবে স্কুল কেডস। জুতার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ৬‘শ টাকার নীচে কোন স্কুল কেডস নেই। সেই হিসেবে ২ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার স্কুল কেডস কিনতে হবে। সবমিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের অভিভাবকদের খরচ করতে হবে ৩৬ কোটি টাকা।
স্কুল ড্রেস বানাতে ব্যস্ত শহরতলীর পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকার দর্জি ইয়াছিন মিয়া। তিনি ছেলে মেয়ে উভয়ের পোষাক তৈরী করেন। ইয়াছিন মিয়া জানান, ইতিমধ্যে অনেক অর্ডার এসেছে। দ্রুত পোষাক ডেরিভারি দিতে হচ্ছে।
রোকেয়া আক্তার নামে একজন অভিভাবক জানান, তার দুই সন্তান লেখাপড়া করে। একজন নবম শ্রেণীতে আরেকজন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে। ওদের স্কুল ড্রেস পরা যাচ্ছে না। স্কুল ড্রেস পরণে হচ্ছে না, আটোসাটো হয়ে যায়। টেনে টুনে পরতেও কষ্ট হয়। এ কারণে নতুন করে বানাতে হবে। একই কথা বলেন জামিল হোসেন নামে আরেকজন অভিভাবক। দর্জির দোকানে আসা এই অভিভাবক বলেন, নতুন স্কুল ড্রেস থাকার পরও ফের বানাতে হচ্ছে। কারণ আগেরগুলো আর গায়ে আটছে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতী শেষেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে। স্কুল কোড মেনে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার প্রাণ পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলার অর্থনীতির চাকা বেশ খানিকটা সচল হবে। যার সুফল অনেকেই ভোগ করবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের সদা সতর্ক থাকা জরুরী।