নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের ঝনঝনানি

|| নিউজনারায়ানগঞ্জ২৪.নেট ০১:০১ এএম, ১ জানুয়ারি ২০১৫ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রের ঝনঝনানি

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেড়েছে সংঘাত। জমি জমা দখলে ভাড়ায় খাটছে রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মধ্যকার দু’টি সংঘর্ষের ঘটনাতেও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এতে করে বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র ব্যবসার দু’টি সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করতে সক্ষম হলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারী সন্ত্রাসীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো জোরদার অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছে নারায়ণগঞ্জবাসী।  

 

জানা গেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে ফতুল্লার রসুলপুর এলাকায় স্থানীয় মাদক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারীর উপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা। পরে এলাকাবাসী তাদের ঘিরে ফেললে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় শনিবার মোক্তার হোসেন ওরফে কিলার মোক্তার, জাকির হোসেন ওরফে এসপি জাকির, আব্দুল মালেক, কামরুল ওরফে কালা কামরুলসহ ২০ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয়েছে।   গত ২৬ ফেব্রুয়ারী শহরের হাজীগঞ্জ এম সার্কাস এলাকায় একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের নিয়োজিত ক্যাডার বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শণ করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় বস্তিবাসীদের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারী রূপগঞ্জের খৈসাইর এলাকায় জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ নেতা নুরুজ্জামানের সঙ্গে অপর আওয়ামীলীগ নেতা সাত্তার মিয়ার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়।   ৬ ফেব্রুয়ারী ফতুল্লার গাবতলী এলাকায় আওয়ামীলীগের রফিক-উজ্জল গ্রুপের সঙ্গে একই এলাকার শাহীন গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সন্ত্রাসীরা ৫-৬ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। সংঘর্ষে আহত হয় অন্তত ১২ জন। একইদিন সিদ্ধিরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়। ৫ ফেব্রুয়ারী রাতে বন্দর খেয়াঘাট এলাকায় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জহির ও পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়।  ১৬ জানুয়ারী রূপগঞ্জের পাবই এলাকায় শওকত বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নিরীহ গ্রামবাসীর উপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও  ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা ও বাড়িঘরে ভাংচুর চালায়। এতে ওই এলাকার সালাম মিয়া ও জিন্নত আলী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ১০ জানুয়ারী রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকায় সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলিবিনিময় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ৫ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় ছাত্রদল ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম গুলি ছোড়ে। পরদিন একটি জাতীয় দৈনিকে জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহনিজামের অস্ত্র হাতে থাকা ছবি প্রকাশিত হয়। যদিও শাহ নিজাম জিডিতে উল্লেখ করেছেন অস্ত্রটি বৈধ। তিনি জীবন রক্ষার্থে গুলি ছুড়েছিলেন।  ১৫ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের চিত্তরঞ্জন এলাকায় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার গোলাগুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ৫জন আহত হয়। ৯ ডিসেম্বর ফতুল্লার ভোলাইলে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫জন আহত হয়। ৮ ডিসেম্বর আড়াইহাজারের দুর্গম চরাঞ্চল কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব কান্দি এলাকাতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৫জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। ৩০ নভেম্বর আড়াইহাজারের পাঁচরুখীতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ব্যাপক গোলাগুলিতে যুবলীগ কর্মী আমজাদ নিহত হয়। এসময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০জন আহত হয়। ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন নিতে যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী ভাতিজা মনির ও রাজু গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়। ১৮ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ঠিকাদারী কাজকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ১০জন আহত হয়। ১২ নভেম্বর ফতুল্লার ভোলাইলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৫জন আহত হয়।   এদিকে ১২ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা এলাকা থেকে অস্ত্র, ম্যাগজিন ও গুলিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ৪টি পিস্তল, ৭টি ম্যাগজিন ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার করতো শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের স্কুল ব্যাগ। গ্রেফতারকৃত ৬ জনের মধ্যে ৩ জনই ছিল শিশু ও ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারী সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় তল্লাশীকালে জার্মানীর তৈরী রিভলবার ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ রুবেল (২২) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে দুইজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশী পিস্তল,  ১০টি ম্যাগজিন, ৫ রাউন্ড গুলি এবং ৩টি মোবাইল হ্যান্ডসেট উদ্ধার করা হয়।  

 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, সরকার ও বিরোধীদল দু’পক্ষই গণতান্ত্রিক রাজনীতি রক্ষা করতে চাননা। তাদের অগণতান্ত্রিক চিন্তার কারনে মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে।

 

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, গোড়ায় যদি গলদ থাকে অর্থাৎ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে যদি সমস্যা থাকে তাহলে এর প্রভাব সর্বক্ষেত্রেই পড়ে। রাজনীতি যখন প্রতিহিংসা পরায়ণ হয় তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। এর দায় সরকারের উপরই পড়ে।  

 

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন নিউজ নারায়ণগঞ্জকে জানান, গত দু’মাসে পুলিশ সবচেয়ে বেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। একদিনেই আমরা ৪টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হচ্ছে। আমরা চাই জনগণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে।



নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর