হেফাজত নামক বিষাক্ত সাপ পুষেছি
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:২৮ পিএম, ৪ মে ২০২১ মঙ্গলবার

সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশব্যাপী আলোচিত বিষয় হলো হেফাজতে ইসলামের অস্বাভাবিক উত্থান। যে উত্থান সমগ্র দেশবাসীর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই উত্থান ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জেই তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
৪ মে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু খোলামেলা কথা বলেছেন।
তিনি নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্ম। ৫২ ভাষা আন্দোলন ৬৯ গণঅভ্যুত্থান সহ প্রত্যেকটি আন্দোলনে অগ্রণী ভূূমিকা ছিল নারায়ণগঞ্জের ছাত্র শ্রমিক জনতার। শুধু এটাই না ১৯৭৫ সালে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের খুব অল্প জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছে সেখানে নারায়ণগঞ্জ প্রতিবাদ করেছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। স্বাধীনতার ফসল হিসেবে বঙ্গবন্ধু যে সরকার গঠন করলো সে সংবিধানের প্রথম কথা হলো এখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চলবে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তৎকালীন স্বৈরশাসকেরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রচলন ঘটায়। যার কারণে জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পায় এবং সুযোগ পেয়েই তারা অপরাজনীতি শুরু করে। এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র জনতার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। এই নারায়ণগঞ্জের ছাত্র জনতাই গোলাম আজমকে নিষিদ্ধ করেছিল। সেই নারায়ণগঞ্জে হেফাজত ইসলাম নাশকতা চালায়।
আনিসুর রহমান দিপু বলেন, হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্র্মসূচি ছিল না। ডিআইটি এসে রফিকুল ইসলাম মাদানী আর আব্দুল আউয়াল বক্তব্য দেয়। এখান থেকেই তারা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। এটা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কতবড় লজ্জাস্কর বিষয়। সারা বাংলাদেশে কোথাও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে নাই নারায়ণগঞ্জ এতে কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলো। যে কর্মসূচির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে তান্ডব চালানো হয়। এরা কিভাবে সাহস পেলো। এই সাহস পাওয়ার কারণ হলো নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। এ কারণেই এখানে মৌলবাদী অপশক্তি সুযোগ পায়। যেটা পাওয়ার কথা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হলো কেন জানি নারায়ণগঞ্জ জঙ্গীদের মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। জেএমবির বড় নেতা সালাউদ্দিনের বাড়ি বন্দরে হলি আর্টিজোনের জঙ্গি তানিমকে ধরলো পাইকপাড়া থেকে। ১৬ জুন বাংলাদেশের বড় বোমা হামলা হলো নারায়ণগঞ্জে। জেএমবির প্রধান আব্দুর রহমানের সহযোগী ডা. সাইদুর রহমান ধরা পড়লো নারায়ণগঞ্জে। রমনার বটমূলে বোমা হামলাকারীদের কয়েকজনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২১ আগস্ট বোমা হামলার গ্রেনেড নিক্ষেপকারী নারায়ণগঞ্জের শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল। গোয়েন্দা রিপোর্র্ট অনুুযায়ী মুফতি হান্নান অনেকগুলো মিটিং করেছে নারায়ণগঞ্জে। ২১ আগস্ট বোমা হামলার নায়ক সহোদর দুুই ভাই ভারতে গ্রেপ্তারকৃত মোরসালিন মোত্তাকিম দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিল নারায়ণগঞ্জে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেই নারায়ণগঞ্জকে বেছে নেয়া হয়। রাজধানীতে কোনো নাশকতা চালাইতে হলে কাছাকাছি জেলা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে শিল্প এলাকা। এখানে বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাতায়াত করে। যার কারনে এখানে অপরিচিত লোকজন অবাধে চলাচল করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো যেখানে রাজনীতি না থাকে রাজনৈতিক চর্চা না থেকে সেখানে অপরাজনীতি ঢুকে।
দিপু বলেন, আমরা ছাত্রলীগ করছি আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল। এখনকার ছাত্রলীগেও প্রতিজ্ঞা আছে তারা সেটা ধারণ করে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করবো। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা এগিয়েছি। আমরা প্রচুর পড়ালেখা করতাম। রাজনৈতিক ক্লাস হলো বিভিন্ন বিষয় জানতে হতো। কিন্তু বর্তমান ছাত্ররাজনীতি যারা করে তারা লেখাপড়ার ধারধারি না। তাদের কোনো প্রতিজ্ঞা নেই কোনো আদর্শ লালন করে না। এখন যারা ছাত্রলীগ করে তারা মনে করে ছাত্রলীগ করলে ১০জন আমাকে সালাম দিবে। কোনো আদর্শ থেকে তারা রাজনীতি করে না। রাজনৈতিক চর্চা নেই। তবে দুুই একজন ব্যতিক্রম হতে পারে।
তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যে কোনো দেশের জন্য খারাপ জিনিস। আমি মনে করি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকা উচিত না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার মূল চেতনা হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকবে না। জামায়াতে ইসলামী হেফাজতে ইসলাম যেমনিভাবে বাংলাদেশে আইনত অপরাধ তেমনিভাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু মহাজোট ও জাগো হিন্দু এগুলোও অপরাধ। এটা আমি আমার জায়গা থেকে সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলছি। এগুলো সবই সাম্প্রদায়িকতা। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলিম ঐক্য পরিষদ হয় না। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য চেতনার উৎকর্ষ সাধনের মানুষকে দেশ প্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলার জন্য এসব দল নিষিদ্ধ করা উচিত।
দিপু বলেন, আমরা নিজেদের স্বার্থে মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছি। আমাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাশকতা চালাতে পারে। আমাদের কারণে তারা কত শক্তিশালী হয়ে গেছে। হেফাজতকে লালন পালন করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করবো কিন্তু দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা হলে সেই সাপ প্রথমেই আমাকে ছোবল দিবে। এটাই হচ্ছে সাপের নিয়ম। কোনো অবস্থাতেই সাপকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত না। হেফাজত হচ্ছে বিষাক্ত সাপের মতো। আমাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণেই সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যাপক তান্ডব করে এবং সোনারগাঁয়ে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। সেখানে তাদের টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ। যেটা কল্পনার বাইরে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকাবস্থায় হামলা হয়। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুর্র্গ বলে আমলা গর্ববোধ করি সেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পার্টি অফিসে হামলা হয় আমরা কিছু করতে পারলাম না। আমাদের চিন্তা করা উচিত কোন কারণে এসকল ঘটনা ঘটছে। আমাদের আশ্রয়ে হেফাজত মৌলবাদী শক্তি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।