চলে যাচ্ছেন ‘জাহিদ ভাই’
সাবিত আল হাসান,স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:০৯ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২১ শনিবার

নারায়ণগঞ্জ জেলার করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন ডা. জাহিদুল ইসলাম। এর পূর্বে সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে চিনতেন তাকে। তবে এক করোনা মহামারীতে নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন ডা, জাহিদ। করোনা রোগী থেকে শুরু করে সকল সেবাপ্রার্থী মানুষের কাছে তিনি এতটাই আপন যে সকলের মুখে ‘জাহিদ ভাই’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এমন মুহূর্তে তার বদলি হবার সংবাদে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সকলে। বর্তমানে তাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ম্যানেজমেন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তার বদলির সংবাদে শহরজুড়ে নাম সর্বস্ব ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ী এবং ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেটে নীরব উল্লাস নেমে এসেছে।
নারায়ণগঞ্জে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার কিছুদিনের মাথায় করোনায় আক্রান্ত হন ডাঃ জাহিদ। স্বশরীরে অফিস না করলেও বাসা থেকে মুঠোফোনে সেবা দিয়ে গেছেন সেবাপ্রার্থীদের। করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তির জন্য নমুনা সংগ্রহ এবং গুরুতর রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রেরণের দায়িত্ব পালন করছিলেন অসুস্থ শরীর নিয়েই। নানান মানুষের নানান রকম কথাবার্তাতেও তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে কারও সাথে কথা বলেছেন এমন কোন নজির নেই। সকল রোগী ও তার পরিবারের সাথে ধৈর্য্য সহকারে কথা বলে তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার সুন্দর ব্যবহার, মানবিকতা, এবং আন্তরিকতা তাকে মুহূর্তেই জনপ্রিয় করে তুলেছে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে।
ডা. জাহিদ বলেন, আমার ফোন আসা বেড়ে গেলে বুঝতে পারি নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। ইদানিং অনেক ফোন আসছে আমার কাছে। ফলে করোনা পরিস্থিতি এখন যে ভালো নয় তা সহজেই বুঝতে পারছি। শুধু সংক্রমণ নয়, হাসপাতালের সিট, অক্সিজেন এসবের জন্য মানুষ বেশী ফোন দিচ্ছেন। তাছাড়া করোনা টেস্ট, ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন তো আছেই।
নারায়ণগঞ্জে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনাকালে রাজনীতিবিদদের ব্যাপক সহায়তা পেয়েছি। তাদের সহায়তা না পেলে মানুষকে সেবা প্রদান করা কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা যথেষ্ট সহায়তা করেছে আমাদের। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেখভাল করা, তার খোঁজ নেয়ার কাজগুলো তাদের দ্বারা সহজ হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের সিনিয়র এক নার্স বলেন, ডা. জাহিদুল ইসলাম ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে প্রবেশ করলে ৩য় শ্রেনীর মানুষ দ্রুত বেরিয়ে যায়। এরা হচ্ছেন ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড ও হাসপাতাল জুড়ে ঘোরাফেরা করা ডায়াগনস্টিকের দালাল, বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রিজেন্টিটিভ এবং বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। তার বদলির সংবাদে এই চক্রটি বেশ উচ্ছ্বাসিত।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের একটি সূত্র জানায়, ডাঃ জাহিদ শুধু রোগীদের সেবা ও আন্তরিকতায় জনপ্রিয় হয়েছেন এমন নয়। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে কঠোর হয়েছেন। তিনি চেয়েছেন মানুষ কম টাকায় সরকারি হাসপাতালে সেবা পেয়ে উপকৃত হোক। বছরের পর বছর দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন তিনি। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবেও কেউ যদি তার কাছে সেবা নিতে আসতো, একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না। তার এমন মহৎ গুনের কারনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন নারায়ণগঞ্জজুড়ে।
তবে এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ডাঃ জাহিদ। তিনি বলেন, আমার সরকারি দায়িত্ব যেটুকু আমি তা পালন করেছি সিভিল সার্জন স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী। সরকারি চাকুরীজীবী হিসেবে আমাকে যেখানে দায়িত্ব দেয়া হবে সেখানেই সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবো।