সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোকজ উৎসব শুরু মঙ্গলবার
সোনারগাঁ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৭:০১ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ রবিবার

সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে ১৫ জানুয়ারী মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। মেলা উপলক্ষে ইতিমধ্যে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার প্রস্তুতি শেষ করেছেন। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের সাবেক কমান্ডার সোহেল রানা প্রমুখ।
১৩ জানুয়ারী রোববার দুপুরে ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরী মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ এসব কথা সাংবাদিকদের জানান।
এবারের মেলার আকর্ষণ গ্রামীন লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম “ভালবাসার তামা- কাঁসা- পিতল শিল্পের” বিশেষ প্রদর্শনী। প্রদর্শনী উপলক্ষে গবেষনামূলক একটি ক্যাটালগ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করেছে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। এবারের মেলায় বাজেট ধরা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও মেলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে মেলা চত্বরে চলছে নানা প্রস্তুতি। ফাউন্ডেশনের পুরো এলাকায় বর্নাঢ্যভাবে সাজানো হয়েছে।
ফাউন্ডেশন সূূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল থেকে ৬০ জন কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মা-রার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের নক্শি পাখা, রংপুরের শত রঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারু শিল্প, নক্শিকাঁথা, নক্শি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারু শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোস শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্ত শিল্পসহ মোট ১৭০টি স্টল থাকছে।
এছাড়াও লোক কারু শিল্প মেলা ও লোকজউৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান,লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।
সরজমিনে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে মেলার বিভিন্ন স্টলের দোকানীরা তাদের পন্য সাজাতে শুরু করেছেন। এছাড়া মেলার মুড়ি, মুরকির দোকান সাজিয়ে বসেছেন। যারা এখনও স্টল সাজাতে পারেননি তারা দোকান সাজানোর জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রোববার বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ফাউন্ডেশনে আগত দর্শনার্থীরা মেলা উদ্বোধনের আগেই তাদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে মেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্য, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন এবং পুনরুজ্জীবন এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।