বুলবুল চৌধুরী ছিলেন নিভৃতচারী শিক্ষাবিদ কবি সাহিত্যিক
সিটি করেসপন্ডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৮:৫৯ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি বিশিষ্ট সাহিত্যিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ বহু আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার সারাদিন ব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী নিভৃতচারী একজন শিক্ষাবিদ, কবি ও কথা সাহিত্যিক। হাওয়ায় উত্তরীয় উড়িয়ে দিয়ে দিনান্তের পাঠ চুকিয়ে চলে গেলেন। চলে গেলেন সেখানে, যেখান থেকে কেউ আর ফেরেনা কখনো। মাটির অনেক নিচে চলে গেলেন, দূর আকাশের পারে কোন এক অচেনা আঁধারে। ‘----স্বপ্নের জগৎ চিরদিন রয়/ সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব/ নক্ষত্রেরও একদিন আয়ু শেষ হয়।’
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষা বিস্তারে ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বুলবুল চৌধুরী। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সমৃদ্ধ করেছেন এ অঞ্চলের শিক্ষা , শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। বুলবুল চৌধুরী তাঁর পোশাকী নাম। লেখালেখি ও সংগঠনের জন্য তিনি এ নামে পরিচিত। প্রকৃত নাম এএফএম আক্তারুজ্জামান চৌধুরী। ১৯৪৬ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার নরসিংদী মহকুমার একদুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা আব্দুল গফুর চৌধুরী ছিলেন অঞ্চলের প্রসিদ্ধ শিক্ষক। পান্ডিত্যের জন্য এলাকার মানুষ তাঁকে ‘পন্ডিত গফর’ বলে জানতেন। মা সাহেবা খাতুন। ঢাকা বোর্ডের অধীনে ১৯৬১ সালে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৬৩ এইচএসসি পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলায় ¯œাতক ও এমএ পাশ করে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০০৫ সালে অবসর নেন। মাঝে ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
বুলবুল চৌধুরী ১৯৬৪ সালে পাকাপাকিভাবে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন। সে সময়েই এখানে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সাহিত্য বিতান যাত্রা শুরু করলে তিনি এ সংগঠনের সাথে জড়িত হন। একাধারে কবিতা ও গদ্য সাহিত্যে বিচরণ করেছেন। কৈশর থেকেই তাঁর লেখালেখি শুরু। ১৯৬৯ সালে সিনে-মাসিক‘চিত্রলেখা’য় প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘কত রাধিকাফরেিলা’। কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরীয় উড়ছে হাওয়ায়’।
গ্রন্থের শিরোনামের সাড়ে চার’র লাইনের দীর্ঘ কবিতাটি ইতিহাস-আশ্রয়ী এক অনবদ্য রূপক কবিতা। ষাট ও সত্তরের উত্তুঙ্গ সময়ে এ কবিতার চাষবাস। বাংলা কাব্য সাহিত্য এ এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তাঁর পাঠচর্চা ও পান্ডিত্য ছিল ঈর্ষনীয়; কিন্তু লিখেছেন খুবই কম। নির্ভিবাদী ও প্রচারবিমুখ এক কাব্যসত্ত্ব তাকে সব সময় আচ্ছন্ন কওে রেখেছে।
তাঁর উপন্যাস ‘কত রাধিকা ফুরালো’ ২০০৯ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে তিনি কৈফিয়তে লিখেন, ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র সতের দিনে এ উপন্যাসটি রচনা করেছিলাম। নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে মুখরক্ষার জন্য মঞ্চদখল করার মতো বাইশের যৌবন তরঙ্গ ৫২’র দ্বিতীয় যৌবনকে উদ্বেলিত করলে ক্ষতি কী? বুলবুল চৌধুরী ১৯৭২ সালে রওশন চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তিনি পেশায় শিক্ষিকা। তাঁদেও এক পুত্র দুই কন্যা। ছেলে শামীম চৌধুরী , মেয়ে নাহিদ হাসিনা সিলভী ও নাহিদ ফারহানা সিনথিয়া।
স্বাধীনতা উত্তর সময়ে নারায়ণগঞ্জে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিমন্ডল নতুন করে উজ্জীবিত হলে এখানে বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম হয়। বুলবুল চৌধুরী ‘শাপলা’, ‘পলাশ’ ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে এ পরিমন্ডলে সমৃদ্ধ করেন। ১৯৮১ সালে ‘নারায়ণগঞ্হ সাংস্কৃতিক জোট’ যাত্রা শুরু করলে জোটের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হন তিনি। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে বাগ্মীতার জন্য সমাদৃত ছিলেন। ভালো আবৃত্তি করতেন, দীর্ঘ কবিতা অনায়াসে মুখস্থ পাঠ করতেন। চর্যাপদ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের কবির কবিতা মুখস্থ আবৃতি করতেন।