সাহিত্যের কান্ডারী আমজাদ হোসেন

জাহাঙ্গীর ডালিম || ১১:৫৩ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

সাহিত্যের কান্ডারী আমজাদ হোসেন

প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত প্রিয় শহর নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদের জনতার কাঁচা মাটিতে ফোটা এক গন্ধরাজ ৫২ থেকে ৭১ অত:পর ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ দেশে প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে যার গন্ধের স্বরূপ উপস্থিতিতেই জানান দিয়ে দেয় তিনি যে বাংলা সাহিত্যের সংস্কৃতির ছায়া তরুতুল্য মহৎ কীর্তিমান কেউ একজন তাকে নতুন করে পরিচয় করার প্রয়োজন হয় না। এই শহর তাকে কবি হিসেবে বেশী চেনে। ষাট দশকের শক্তিশালী কবি আমজাদ হোসেন সাহিত্য বিতানের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সাহিত্য চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যান। স্বাধীনতার পর তিনি সাহিত্য বিতানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন শাপলা এবং পলাশের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার দুইটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিল “এই আমি এই দেশে”। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে এসে আরেকটি পরিচয় রয়েছে সেটা অভিনেতা হিসেবে। কবি আমজাদ হোসেন শুধু কবিতা আর অভিনয়েই যুক্ত ছিলেন না, ছিলেন চলচ্চিত্র মাধ্যমে যে চলচ্চিত্রটির সাথে তার নাম জড়িয়ে আছে সেই চলচ্চিত্রটিও একটি ইতিহাস। ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন ছবিটির সহ পরিচালক। আমাদের শহর এই রাষ্ট্রের মতোই ইতিহাস বিমুখ। সুতরাং কবি নামের আড়ালে আমজাদ হোসেন তিনি শিক্ষকতা করেছেন সম্ভবত সাংবাদিকতাও করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি কবি।

কবি আমজাদ হোসেন তরুন কবিদের কবিতা পাঠ করলে আলোচনা করতেন। সেটা সাহিত্য জোট, অনুপ্রাস, প্রগতি সাহিত্য পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সাহিত্য ফোরাম কিংবা সুহৃদ লেখক সংঘ। শহরের সাহিত্য সংগঠক হিসেবে প্রথম সারিতে ছিলেন। মহান স্বাধীনতাত্তোর এবং স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এই নারায়ণগঞ্জে বহুগুণী সাহিত্যিকদের আর্ভিভাব হয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে কেউ কেউ মেধা মনোনের উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁরাও আমার অহংকার নারায়ণগঞ্জের গর্ব। একথা বলার কারন হলো সর্বজন স্বীকৃত কবি অর্থাৎ অগ্রজ, অনুজ সম-সাময়িক সকলেই একটি নামের পূর্বে সচেতনতার সাথে অকোপটে কবি সম্বোধন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের কাব্য কাশের চিন্তুা শিল্পে চর্চায় এক নিরলস ব্যক্তি প্রতিভা। তাঁর সৃজনশীল রচনা আপোষেই মনস্থিতা, উদার হৃদয়ের ঝংকার বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে অবারিত ডানায় উড়ে বেড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি যে আমাদের প্রিয় নারায়ণগঞ্জ হতে চিন্তা বিশ্বে ঢিলের পর ঢিল ছুড়ে তরঙ্গ তুলতেন। জীবনকে জীবনের কাছে শিল্পকে শিল্পের কাছে ন্যাস্ত রেখে একটি পরাক্রমশালী চেতনাদন্ড নির্মাণকারী আমার দেখা সর্বজন স্বীকৃত কবিখ্যাতি অর্জনের একমাত্র অধিকারী সবার প্রিয়জন ব্যক্তিত্ব কবি শ্রদ্ধেয় আমজাদ হোসেন।

আগস্ট মাস আসছে এই কথা যখন আমার কানে আসার পর কেবল বায়োলিনের করুন সুর ব্যতিত অন্যকিছু সহসাই শুনতে পাইনা ! অচেনা আতংকে ভোগী। ভাবনা তখনও উতয় অস্ত যায়নি। কিন্তু বায়োলিনের করুন সুর আমার আতংকিত হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসা হারানো শোকে। এই আগস্ট মাস খুবই দুঃখ ও কষ্টের মাস। এই মাসটা আসলেই আমি কষ্ট ও দুঃখ পেতাম। ১৫ই আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে। আর আমার মা’ও ৩০শে আগস্ট আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এই আগস্টের ০১ তারিখে আমজাদ হোসেন’ও চলেন গেলেন। প্রকৃত মাটির কবি আমজাদ হোসেন হয়তো স্ব-শরীরে উপস্থিত হবেন না কখনো। কখনো আমাদের মাঝে তাঁকে জীবন্ত করে রাখবেন তাঁর যে কর্মে তাঁকে করেছেন। মহৎ ও কীর্তিমান। একটি অনুরোধ করবো তাঁর জীবন ও কর্ম ঘনিষ্ঠ যেসব প্রবীণ সংস্কৃতি কর্মী আছেন আমরা আশা করবো তাঁরা আমজাদ হোসেন এর সামগ্রিক কর্মজীবন তুলে ধরবেন আমাদের সামনে।



নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও