ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম ভবন উদ্বোধন

মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম (প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক) ভবনের নাম ফলক উন্মোচন-২০২১ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের আনোয়ার হোসেন মিলনায়তনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম ভবনের নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের গভনিংবডি সভাপতি আনোয়ার হোসেন। এর আগে অতিথিদের নিয়ে মর্গ্যান স্কুল এন্ড কলেজের শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের দৌহিত্রী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফারজানা ইসলাম রূপা, দৌহিত্র পেট্টোবাংলা সিলেটের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রওনাকুল ইসলাম অপু, দৌহিত্রী অতিরিক্ত কর কমিশনার ড. নাশিদ রিজওয়ানা মনির গোপী। উপস্থিত হতে পারেনি ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের দৌহিত্র ব্যবসায়ী ওয়াসীম ইসলাম বাবু।
মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জাসদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলী চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভুইয়া, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরি সদস্য শামসুজ্জামান ভাষানী, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আহসান হাবিব, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, সহ দপ্তর সম্পাদক ছানোয়ার তালুকদার, সদস্য উত্তম কুমার সাহা, শামীম খান, আছিদ্র আক্তার সুমি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন সবুজ, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের গভনিংবডি সদস্য মোশাররফ হোসেন জনি, মর্গ্যান স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা লায়লা বেগম, প্রভাষক কবির চৌধুরী প্রমুখ।
আলোচনা সভায় নানী ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন ছোট দৌহিত্রী অতিরিক্ত কর কমিশনার ড. নাশিদ রিজওয়ানা মনির গোপী। তিনি বলেন, আমার নানী ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম ছিলেন নারীদের অহংকার। তার মত নারী আমাদের সমাজে সৃষ্টি করতে হবে। আমরা নানীকে দেখতে পারি নাই। কিন্তু তার আদর্শ নিয়ে আমার মা-বাবা আমাদের লালন পালন করেছে। সবাই উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশের বিভিণœ প্রশাসনিক দপ্তরে নিয়োজিত রয়েছি। কখন ভাষা বা দেশের জন্য আমাদের নানী মত এগিয়ে আসতে হয়, আমরা সবাই প্রস্তুত।
ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগমের দৌহিত্রী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফারজানা ইসলাম রূপা বলেন, নানী মমতাজ বেগম এই ভাষা আন্দোলনের জন্য নিজের সংসার থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। বাংলা ভাষা জন্য আন্দোলনে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। তখন জেলে বঙ্গবন্ধু আদর্শে কখনে পিছপা হয়নি। বরং আমার নানা জেলে গিয়ে ভাষা আন্দোলন থেকে তার নাম মুছে ফেলতে একটি মুচলেকা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার নানী এই ভাষা জন্য মুচলেকা স্বাক্ষর করেনি। এর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নানা তাকে (নানী) ছেড়ে দেয়। আমার মা-কে নিয়ে তিনি অন্যত্র জেলা চলে যায়। কখনো নানী-কে আমার মা মুখ দেখতে দেয়নি। বরং ১৫ বছরের বয়সে আমার মা-কে বিয়ে দেয় নানা। তখন আমার বাবা’র মাধ্যমে আমার নানীকে দেখতে পান মা। এর পর আমার মা-কে উচ্চ শিক্ষিত হতে আমার বাবা অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমাদের জন্ম, শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি শিক্ষা নিতেন। কিন্তু সংসার জীবনে অনেক চাপ কারণে পরে পড়া শুনা বন্ধ করে দেয়।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ছাত্র জীবন থেকে ছাত্র আন্দোলনে সাথে জড়িয়ে ছিলাম। তখন আনোয়ার হোসেনকে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়। বঙ্গবন্ধু আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি এগিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে কাজ করেছি। তখন আল্লাহ দরবারে বলতাম, এমন নেতা আমাদের দেন যেন তিনি কখনো বঙ্গবন্ধু রক্তের সাথে বেঈমানী করবে না। বিদেশ থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। আন্দোলনের সংগ্রামের মাধ্যমে যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন তখন তিনি বলেছিলেন, আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই।
জাতির জনক বলেছিলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করো। বঙ্গবন্ধু আমাকে অনেক পছন্দ করতেন। এমনকি তার সুযোগ্য কণ্যা শেখ হাসিনা আমাদের অনেক ¯েœহ ও পছন্দ করেন। তিনি আমার বিবাহে সময়ে গায়ে হলুদে নারায়ণগঞ্জে এসে ছিলেন।
তিনি বলেন, বার বার জনপ্রতিনিধি হয়ে ছিলাম কিন্তু নারায়ণগঞ্জ রাজনীতি অনেক পিচ্ছিল। এই পিচ্ছিল বার বার পড়ে যায়। ভাই-বোনের রাজনীতির সে রাজনীতি সমকরণে এগুতে পারি নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা ¯েœহ ও ভালবাসা বলেই আমাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত করে ছিলেন। সে দিন বলেছিলাম, আমি আনোয়ার হোসেন কিন্তু ধণ্যাঢ্য ব্যক্তি নয়। আমার বাবা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে না। আওয়ামীলীগ করে নাই বলে আমি বার বার জনপ্রতিনিধি থেকে বাদ পড়ে যায়।
ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম ভবন নিয়ে আনোয়ার বলেন, আমি ধন্য। আজ আমি ধন্য, আমি মর্গ্যান গভনিংবডি চেয়ারম্যান পদে থেকে আজ সফলতা অর্জন করলাম। এমন এক নারী যিনি ভাষা সৈনিক, নারীদের অহংকার, এই মর্গ্যানের সফল প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আমি দায়িত্ব থাকা অবস্থায় তার নামে ভবন নির্মান করতে পেরে আমরা সভায় গর্বিত।