বাসায় বসে ছাত্রদলের কমিটি, নেতাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে
|| নিউজনারায়ানগঞ্জ২৪.নেট ০১:০১ এএম, ১ জানুয়ারি ২০১৫ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬টি কমিটি ঘোষণা ও ২৪ঘণ্টার মধ্যে বাতিলের ঘটনার পেছনে আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজলের উপর পুরো দায় বর্তালেও এর পেছনে রয়েছে জেলা বিএনপির নেতাদের ইন্ধন। জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের মাসদাইরের বাসায় বসেই এ ৬টি কমিটি গঠন ও সেখানে পছন্দের ব্যক্তিদের স্থান দিয়ে কমিটিগুলো সাজানো হয়। পরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সজল দিলেও সেটা ছিল নাটকের দ্বিতীয় অংশ।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটিতে থাকা একাধিক ছাত্রদল নেতা নিউজ নারায়ণগঞ্জকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাদের কয়েকজন বলেছেন, তারা বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছে। কমিটি গঠনের জন্য তারা মোটা অংকের টাকাও ব্যয় করেছেন। কিন্তু সেটার স্থায়ীত্ব হয়েছে মাত্র ২৪ঘণ্টার যা লজ্জাকর।
৬টি কমিটি গঠনের মধ্যে আহবায়ক ছাড়া অপর ৫জন যুগ্ম আহবায়কের মধ্যে শুধুমাত্র রশিদুর রহমান রশোর মতামত ছিল যিনি সম্পর্কে তৈমুরের ভাগ্নে। এতে করে পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে তৈমূর আলম খন্দকারের সম্পৃক্ততা উঠেছে বেশ জোরেসরে।
এদিকে মহানগর ছাত্রদলের ৬টি কমিটি ঘোষণার মধ্যেই জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন থানার কমিটিও গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুগ্ম আহবায়কদের সঙ্গে আলোচনা না করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চললেও মহানগরের ৬ কমিটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় বাতিলের পর জেলা ছাত্রদল ও জেলা বিএনপির নেতারা সে রিস্ক নেয়নি।
জানা গেছে, কয়েকমাস পুর্বে বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষনা করতে সজলকে চাপ দিয়েছিল তৈমুর আলম। ওইদিন মাসদাইর তৈমুর আলমের বাসায় কমিটি খসড়া নিয়ে বসে ছিলেন বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুউদ্দীন আহম্মেদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। ওই খসড়ায় নুরুউদ্দীনের ভাতিজা শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন তৈমুর। পরে সজল অন্যান্য যুগ্ম আহ্বায়কদের সাথে আলোচনা করে কমিটি দিবে বলে জানায়।
এদিকে গত ২ অক্টোবর একই দিন মহানগর ছাত্রদলের ৬টি ইউনিটের কমিটি ঘোষনা করেন মনিরুল ইসলাম সজল। আর এসব কমিটিকে সমর্থন জানায় তৈমুুর আলম খন্দকার। এমনকি কমিটির নেতাদের কাছ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা নিয়েছেন। তবে প্রত্যেকটি কমিটি গঠনই হয়েছে তৈমুর আলমের মাসদাইরের বাসভবনে বসে। তবে যাদেরকে কমিটির নেতৃত্ব দেয়া হয় ওইসব কমিটিতে থাকা একজনেরও ছাত্রত্ব নেই। এমনকি কোন কলেজের ছাত্রদের সাথেও নেই তাদের সম্পর্ক। কেউ কেউ উচ্চবিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুতে পারেনি। দুএকজন ছাড়া অধিকাংশরাই বিয়ে করে বাবা হয়েছেন অনেক আগেই।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ছাত্রদলের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি রাফিউদ্দীন আহম্মেদ রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএএম সাগর, সহ-সভাপতি আব্দুর সাত্তার, যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ হোসেন খন্দকার ও ফারহান আহম্মেদ নাঈমকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।
বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের হারুন অর রশিদ লিটনকে সভাপতি ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম নুরুজ্জামান, ১ম যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ভ্ইুয়া জনি ও দপ্তর সম্পাদক করা হয় বিজয় হোসেন পনিরকে।
অন্যদিকে বন্দর থানা ছাত্রদলের নেতা মোহাম্মদ রাসেলকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন আশিকুর রহমান আলী, কামরুল হাসান রনি, রাহিদ ইসতিয়াক, জনি মোল্লা, শিপলু, মহসিন, অহিদুর রহমান, অহিদুজ্জামান শাহজাদা, বাপ্পী দেওয়ান, জাহিদ হাসান দিপু, মুনজুর হোসেন ও শামীম মিয়া।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের কমিটির সভাপতি মমিনুর রহমান বাবু ও রিপন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় এরশাদ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আহসান খলিল শ্যামল, সহ-সভাপতি আলী নূর হোসেন, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম সাগর, যুগ্ম সম্পাদক রিয়াজুল আলম ইমন, শাহরিয়ার খান তুষার ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় নাইম সিদ্দিক তুষারকে।
এদিকে সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি করা হয় কাউসার আহম্মেদ নামে একজনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় কাশিপুরের ভুমিদস্যু হিসেবে পরিচিত সাইদুর রহমান। সিনিয়র সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান অনি, সহ-সভাপতি মাসুদ রানা, যুগ্ম সম্পাদক শাহজালাল, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় বাইজিদ আল কাউসার ও রফিকুল ইসলামকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি করা হয় জোবায়ের ঝলক, সাধারণ সম্পাদক শান্ত জামাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম ইরাম, যুগ্ম সম্পাদক রিকসন ও মাসুম বিল্লাহকে সহ-সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি ঘোষনা শেষে আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, দীর্ঘদিন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের কোন কমিটি হয়নি। দীর্ঘদিন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাজপথে কাজ করছে। তাদের পদ দেয়া হচ্ছে না। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও অন্যান্য যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়নি। আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করতে বাকী যুগ্ম আহ্বায়কদের কোন সাড়া না পেয়ে এবং রাজপথের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে অনেকটা বাধ্য হয়ে কমিটি গঠন করতে হয়েছে। এ কমিটিতে যারা নেতৃত্বে আছে যারা আরও কঠোর আন্দোলন করবে। রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারো সাড়া না পেয়ে একক সিদ্ধান্তে কমিটি গঠন করেছি। যদিও দুএকজনের সাথে মতবিরোধ থাকতে পারে। তবে বাকী সব যুগ্ম আহ্বায়কদের এ কমিটিতে সমর্থন রয়েছে। ছাত্রদলের গঠনততন্ত্র মোতাবেক আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক দলের স্বার্থে একক ভাবে কমিটি গঠন করতে হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬টি ইউনিটের কমিটি গঠন এবং সেই কমিটি ২৪ ঘন্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্দেশে বাতিল ঘোষনা করার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, দীর্ঘ ১ বছর ৮ মাস হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতারা থানা, কলেজ কমিটি গঠন করতে পারেনি। এতে শুধু জেলা-মহানগর ছাত্রদল নয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারন তাদের দায়িত্ব হলো জেলা ও মহানগর ছাত্রদলকে নার্সিং করা, নিয়ন্ত্রন করা, নির্দেশনা দেয়া। কিন্তু সেটা তারা করেনি। কেন্দ্রীয় নেতাদে উদাসীনতার কারনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে আন্দোলনে নেই। আর কমিটি গঠন করা হবে না-তাহলে যারা রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হবে তারা কি হালের পাল নাকি? তারা জাতীয়তাবাদী শ্লোগান দিয়ে নির্যাতনের শিকার হবে কিন্তু তাদের কোন পদ থাকবে না?