আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে নালিশ, খোকার বরাদ্দ স্থগিত
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৩:৩৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবার নিজেই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। দিয়েছেন তাদের কাছে সাম্প্রতিক ঘটনার বিবরণ। সঙ্গে করেছেন নালিশও। আনোয়ার হোসেনের ভাষ্যমতে কেন্দ্রের সবাই বিষয়টি জানে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন অচিরেই এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
২৩ নভেম্বর সোমবার আনোয়ার হোসেন যান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির কাছে। যুবলীগের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। আনোয়ার হোসেন দীর্ঘক্ষণ মির্জা আজমের সঙ্গে কথা বলে সোনারগাঁয়ের ঘটনা সম্পর্কে জানান। ওই সময়ে মির্জা আজম সব শুনে বলেন, ‘আমি বিষয়টা জানি।’
এক পর্যায়ে মির্জা আজম ফোন দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের কাছে। তাঁর কাছ থেকেও ঘটনা সম্পর্কে ধারণা নেন আজম। ওই সময়ে মির্জা আজম মুঠোফোনেই আবদুল হাইয়ের কাছ থেকে সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চান। এবং তাদের কোন উদ্যোগ না নেওয়াতে প্রয়োজনে শোকজের নির্দেশ দেন।
সকালে আজমের সঙ্গে দেখা শেষে বিকেলে সাক্ষাৎ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। ওই সময়ে আনোয়ার হোসেন নিজেই ওবায়দুল কাদেরকে সব জানান। তখন ওবায়দুল কাদের জানান যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওয়াকিবহাল। এ বিষয়ে কিছু করতে হলে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রধামন্ত্রী নিজেই নিবেন।
এ ব্যাপার আনোয়ার হোসেন নিউজ নারায়ণগঞ্জকে দুইজন শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এদিকে সন্ধ্যায় জেলা পরিষদে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর এ তিনদিন জেলা পরিষদে প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এছাড়া এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সোনারগাঁও আসনে জেলা পরিষদ থেকে সকল উন্নয়ন কাজ স্থগিত থাকবে। বন্ধ থাকবে বরাদ্দকৃত অর্থের বিষয়টিও।
জানা যায়, গত ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।
আর এই ঘটনার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছেন। তারা লিয়াকত হোসেন খোকাকে কোনোভাবেই ছাড় দিবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনার পর আমি সকলকে বিষয়টা জানিয়েছি। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু অনেকেই এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তারাই আন্দোলন করে আসছে। আর বিষয়টা যেহেতু জেলা পরিষদের ফলক ভাঙচুরের।
ফলক ভেঙে ফেলার পর থেকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে ফুঁসে উঠে। অবশেষে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। আন্দোলনের মুখে এই ফলক পুন:স্থাপন করা হয়। আর এ বিষয়টিকে স্থানীয় অনেকেই এমপি খোকার প্রায়শ্চিত্ত বলে মনে করছেন।
২২ নভেম্বর বিকেলে সোনারগাঁও জি আর ইনিস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের মূল গেইটের সামনের থাকা ভাঙা ফলক পাল্টে নতুন ফলক স্থাপন করা হয়। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ফারুক হোসেন ভূঁইয়া।