বোবা কান্নায় হদয় পুড়ে : আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ

স্টাফ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:২৯ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার

বোবা কান্নায় হদয় পুড়ে : আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টুকে মনোনয়ন দিতে সুপারিশ করেছে ইউনিয়নের নেতারা যে তালিকাতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাউকে রাখা হয়নি। ইউনিয়নের তালিকা ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আবু হাসনাত শহীদ বাদল ৬ অক্টোবর কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। তবে জেলার অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় কুতুবপুর নিয়ে যে নাটকীয়তা ঘটেছে তাতে হতাশ দলের নেতাকর্মীরা। অনেকেই এখন আওয়ামী লীগ আর বাঘা বাঘা নেতাদের আদর্শিক রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে দেশের বাইরে ছিলেন এমপি শামীম ওসমান। ওই সময়ে ফতুল্লা থানা এলাকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘঠিত করেন সাইফউল্লাহ বাদল ও সেক্রেটারী শওকত আলী। বাদলের একাধিক বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছিল। শামীম ওসমানের মোবাইল ফোনে ভাষণ প্রচারের কারণে বাদল ছিলেন বিএনপির লক্ষ্যবস্তু। বাড়িতে হামলা, একের পর এক মামলার আসামী হতে হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেও জুলুম শেষ হয়নি। দল ক্ষমতায় কিন্তু প্রতিপক্ষ ছিলেন ওই সময়ের এমপি সারাহ বেগম কবরী। বাদলের সঙ্গে দ্বৈরথ কারণ তিনি ছিলেন শামীম ওসমানের লোক। আর শওকত আলীকে তো পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে কারাভোগও করানো হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর ভাগ্যঘুরে যান দুইজনের। কারণ এমপি তখন শামীম ওসমান। ফতুল্লায় রীতিমত রাজত্ব শুরু হয় বাদল শওকতের। ২০১৬ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমান দুইজনকে পুরস্কৃত করেন। কিনে দেন একই মডেলের দুটি নোয়া ভক্সি গাড়ি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন চেয়ারম্যান পদে। এটাকে রীতিমত বিগত বিএনপি ও ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের ত্যাগের পুরস্কার বলা চলে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এতে আপত্তি করেনি। বরং আরো আফসোস করে বলতেন, ‘বাদল ও শওকত যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের স্থান আরো উচ্চতায় থাকার প্রয়োজন ছিল।’ তবে বাদল শওকত তাতেই খুশী। কিন্তু এবার তাঁদের ললাটে পড়ে গেছে এক কলঙ্কের তিলক। কারণ কুতুবপুরে বিএনপির এক সময়ের জ্বালাও পোড়াওয়ের খলনায়ক মনিরুল আলম সেন্টুকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ‘আমরা স্তম্ভিত। কিছু বলার ভাষা নাই। বলতে গেলে রোষানলে পড়তে হবে। একজন বিএনপির খলনায়ককে আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি করতে হবে এটা ভাবতেই আফসোস লাগছে। এত কষ্ট করে দলের প্রতিদান যদি এই হয় তাহলে দল করে আর লাভ নাই। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছি বিএনপির। আর সেই বিএনপির নেতা যখন আমাদের অগ্রগামী হয় তাহলে আর সঠিক ধারার রাজনীতি করার মানে নাই। আদর্শিক রাজনীতি হারিয়ে গেছে।’

অনেকেই বলছেন, কাশীপুর ও বক্তাবলীতে যেভাবে বাদল ও শওকত বিনা বাধায় জয়ী হয়েছেন সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম রসুল শিকদার, কুতুবপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন, থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদার, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেকের মত নেতারা বিগত দিনে সক্রিয় থাকলেও তাদেরকে নিয়ে কেন কোন ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হলো না।

জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি সিকদার মো. গোলাম রসুল ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কুতুবপুরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৩ সালে নির্বাচনে তৎকালীন যুবদল নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বিএনপি সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেন্টু পরবর্তীতে ফতুল্লা থানা বিএনপি`র সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনেও সেন্টু বিএনপির সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী শওকত আলী সময়ের নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। তালিকা দিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখান থেকে একজন মানে সেন্টু সাহেবের নাম এসেছে। সেই নাম আমরা জেলার নেতাদের কাছে পাঠিয়েছি। এখানে আমাদের তো কিছু করার নাই।’

কুতুবপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, আমাদের বর্ধিত সভায় সকলে সেন্টুকে মনোনীত করেছেন। কারণ সে বিএনপিতে এখন নাই। তার বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনও করতে চায় না।


বিভাগ : রাজনীতি


নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও