দুই দলকেই কাঁদালেন সেন্টু

স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:৩৭ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

দুই দলকেই কাঁদালেন সেন্টু

কুতুবপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান সেন্টুর জনপ্রিয়তা উঠেছিলো বিএনপির মধ্য দিতে। বিএনপির বড় একটি ভোট ব্যাংক এই অঞ্চলে বিদ্যমান। ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেই বিএনপির সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে তখনও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মত সাধারণ প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে বাজিমাত করেছিলেন সেন্টু।

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে সেন্টুর প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন বিএনপির আরেক নেতা পান্না মোল্লা। তবে সেবার বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিলো উভয়ের মধ্যে। বিএনপির ভোট দুই ভাগ হলেও শেষতক জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মনিরুল আলম সেন্টু। আর এই নির্বাচনই ছিলো কুতুবপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া শেষ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই জয়ের মধ্য দিয়ে এই ইউনিয়নে নিজের ভবিষ্যৎ সাজিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন সেন্টু।

নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় যখন ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন শুরু হয় ততক্ষনে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছেন সেন্টু। নিজের জয়ের জন্য দলীয় প্রতীক সংগ্রহ না করে দাঁড়িয়ে যান স্বতন্ত্র প্রতীকে। প্রতিপক্ষ নৌকার গোলাম রসুল। লড়াই হয়েছে নৌকা বনাম আনারস। সেবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও কুতুবপুরে ধানের শীষ হাতে দাঁড়ান নি কেউ। তারপরেও ২ বার বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সেন্টুকেই ভোট দিয়েছেন সকলে। তার উপর ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ যুক্ত হওয়ায় অনেকটা হেসে খেলেই নৌকাকে পরাজিত করেন।

টানা ৩ বার জয়লাভের পর এবার চতুর্থ দফায় নির্বাচনে নেমেছেন সেন্টু। প্রতিপক্ষ হাতপাখা মার্কা ছাড়া আর কেউই নেই। একদিকে তিনি নিজে বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি, অন্যদিকে নৌকার প্রতীকের দায়িত্ব। সব মিলিয়ে দুটো ভোটই তার হাতে। আর তাই জয়ের পথ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এলাকায় এলাকায় হাতপাখা মার্কা উঠান বৈঠক, প্রচারণা চালানো শুরু করলেও এসবের প্রয়োজনই ভাবছেন না টানা ৩ বারের বিজয়ী সেন্টু।

তবে নিশ্চিত জয়ের পথে থাকলেও স্বস্থিতে নেই তৃণমূল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। যারা বছরের পর বছর কুতুবপুরে বিএনপি করে আসছেন তাদের সকলেরই সেন্টূর প্রতি ভালোবাসা ছিলো। ইউপি নির্বাচনে ভোট তাকেই দিবেন তা ছিলো পূর্ব নির্ধারিত। গতবার ধানের শীষে ভোট দিতে না পারলেও বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিকে দিতে পেরেছেন। কিন্তু এবার তাদের ভোট দেয়ার কোন সুযোগই নেই। কারন যাকে তারা ভোট দিবেন তিনি গাঁয়ে নিয়েছেন চির প্রতিদন্ধী দলের প্রতীক। আর এতে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতর।

ঠিক একই অবস্থা আওয়ামী লীগে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ যারা করে আসছেন কুতুবপুরে তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিলো সেন্টুকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে চেয়ারম্যান পদে আনা। টানা তিনবারের জয় পাওয়া সেন্টুর জয়রথ থামিয়ে দেয়া। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না তাদের। যেই সেন্টু ছিলো তাদের চির প্রতিদন্ধী সেই সেন্টুই এবার দলের মর্যাদার প্রতীক নৌকা নিয়ে হাজির হয়েছেন। আর তাই কর্মীদের মাঝে তৈরী হয়েছে হতাশা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সানাউল্লাহ সানু বলেন, কুতুবপুরে যারা আওয়ামী লীগ করতো তাদের সংখ্যা ছিলো বিশাল। বিএনপির সংখ্যাও কম নয়। আমরা সবাই চাইতাম যে যেই দল করি সেই দল নিয়েই নিজেকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু নিজেকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যদি অর্থ কড়ি ব্যয় করে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেই তাহলে তো প্রতিযোগীতা হবে অসম। ক্ষতিগ্রস্থ হবে তৃণমূল এবং ত্যাগী নেতারা। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে কুতুবপুরে। এখানে দলীয় মারামারির ঘটনা নেই। যখন পুলিশ সেন্টুর ভাইকে ধরে আমি পুলিশকে ফোন দিয়ে রিকোয়েস্ট করেছি। আমরা যখন বিরোধী দলে তখন আমাদের নেতাকর্মীদেরও সহায়তা করেছে বিএনপির কেউ কেউ। এটা হচ্ছে একই এলাকার কারনে পারস্পরিক সহমর্মিতা। কিন্তু এক দল থেকে আরেকদলে যোগ দিয়ে নমিনেশন নিলে তখন তৃণমূল ক্ষতির শিকার হয়। যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে তারা অবমূল্যায়িত হয়। দলের ভেতর এমন আক্ষেপ ক্রমাগত বাড়ছে।


বিভাগ : রাজনীতি


নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও