বিতর্কিত ফজর আলীর কৌশলী শোডাউনে শামীম ওসমানের ছায়া

স্টাফ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০১:০৬ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

বিতর্কিত ফজর আলীর কৌশলী শোডাউনে শামীম ওসমানের ছায়া

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হচ্ছেন মো. জসিম উদ্দিন। কেন্দ্র থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ফজর আলী যার প্রতি সমর্থন রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের। যদিও এখন পর্যন্ত তিনি সরাসরি তার পক্ষে কোনো কথা বলেননি। তবে তার ছায়া হিসেবে তার অনুসারীরা ঠিকই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ফজর আলীকে।

তারই অংশ হিসেবে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বোর্ডের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ফজর আলীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। শনিবার (২৩ অক্টোবর) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যে সংবর্ধনা উপলক্ষ্যে গোগনগর এলাকায় ফজর আলী নির্বাচনী শোডাউন করেন। তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছেন।

শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুকে সংবর্ধনা দিয়ে গোগনগরবাসীকে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন শামীম ওসমান পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। সেই সাথে এই সংবর্ধনা ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত হয়েছিলেন। কারণ এখানে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে শামীম ওসমানের শ্যালককে।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে তানভীর আহমেদ টিটু সরাসরি কিছু না বললেও আকার ইঙ্গিতে তিনি অনেক কিছুই বুঝিয়েছেন। তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, ‘ফজর ভাই এখানে যিনি উপস্থিত আছেন উনি আমার পরিবারের সদস্যদের চেয়ে কম না। উনি আমার পরিবারের সদস্যের মতো। আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আমার কোনো শত্রু আছে কিনা? আমি চোখ বন্ধ করে জানতে পারি না আমার শত্রু আছে কিনা। কারণ আমি নিজে কাউকে শত্রু মনে করি না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেরটা দিয়ে মানুষের জন্য করতে চায়। সেরকমই একজন মানুষ হলেন ফজর ভাই। উনি চেষ্টা করেন সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে। মানুষের জন্য তিনি নিবেদিত প্রাণ। আমি তার মঙ্গল কামনা করি। আমি তাকে আমার পরিবারের সদস্যের মতোই দেখি। আমাদের পরিবারও তাকে পরিবারের সদস্যের মতো দেখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছি না। আমি শুধু এতটুকু জানি আমাদের সমাজকে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু ভাল মানুষের দরকার। সেই ভাল মানুষ পদ পায় ভাল মানুষ না পায় তাহলেও ভাল মানুষ। কিন্তু আমাদের কিছু দায়িত্ব থাকে আমাদের প্রতিনিধি বানাবো যাকে তাকে পছন্দ করে নির্বাচিত করা সম্মানের আসনে বসানোর দায়িত্বও আমাদের।’

এর আগে গত ২৪ আগস্ট ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় গোগনগর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আর ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল। তার সাথে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফজর আলী।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। আর সেদিন সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফজর আলীর পক্ষে শামীম ওসমানের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন আল মামুন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেছিলেন, ‘ফজর আলীকে (গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী) আমরা আপনারা সকলে মিলে নৌকা পাইলেও পাশ করামো না পাইলেও পাশ করামো। যদি সম্ভব হয় ফজর আলী ভাইকে আমপাতা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করামো। ফজর আলী ভাইকে পাশ করিয়ে নিবোই। নৌকার দরকার নেই। নৌকা একটা মার্কা। ভোট দিবেন আপনারা। ভোট দিব আমরা। ফজর আলী ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি রাখবেন।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমি ৪৯ বছর ধরে পার্টির সেক্রেটারী বিভিন্ন পদে। কোনো দিনও আমার সম্পর্কে কেউ সমালোচনা করছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু এইবার ইচ্ছামতো করছে। কেন করছে জানেন? নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কান্ডারী নারায়ণগঞ্জের বীরপুরুষ নারায়ণগঞ্জের অহংকার যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চলে সেই নেতা (শামীম ওসমান) আমাকে হুকুম দিয়েছে এই পদ্ধতিতে কাজ করবেন। আমি সেই পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত কোনো ইচ্ছা এখানে নাই। আমার কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। জীবনে কোনোদিন চাই নাই কোনোদিন চাইবও না। আমাকে শামীম ওসমান বলেছে আরে আপনি চেয়ারম্যান দিছিলাম। গত নির্বাচনে আমি নমিনেশন পেয়েছিলাম সেই নমিনেশন জসিমকে দিয়েছি। আমার গলায় ধরে কান্নাকাটি করে নিয়েছে। শামীম ওসমান বলেন উনি পাশ করবে না। আমিও পাশ করবো না। শামীম ওসমান বলেন আপনি পাশ করবেন। আমাকে কাটতে হবে।’

আল মামুন বলেন, সেই ভদ্রলোক (জসিম উদ্দিন) চাইনিজ হোটেলে বসে মিটিং করেছিলাম। সেখানে বলেছিল গতবার আপনাদের সাথে যেভাবে ছিলাম এবারও দিগুণভাবে থাকবো দয়া করে নৌকা প্রতিক পাইয়ে দেন। আমি জসিমকে (গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী) বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জে নৌকা প্রতিকের নমিনেশন দিবে ওসমান পরিবার। আমরা দিতে পারবো না আমার সভাপতিও দিতে পারবো না। আপনি ওসমান পরিবারের দিকে তাকান। সেখান থেকে যদি আপনি নমিনেশন আনতে পারেন নৌকা দেয়া আমাদের জন্য কোনো অসুবিধা হবে না। যিনি নৌকা পাবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ইঙ্গিতে কাজ করছেন উল্লেখ করে মামুন বলেন, ‘ফজর আলী সাহেবকে আজ থেকে ৮ মাস পূর্বে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন শামীম ওসমান সাহেব। মামুন ভাই এবার আপনি নির্বাচন কইরেন না। এবার আমি ফজর আলীকে নমিনেশন দিবো। ফজর আলীর পক্ষে কাজ করেন। সেই সুবাধে আমি ফজর আলীর পক্ষে উনার অফিসে মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করি। পত্রিকায় লেখা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ফজর আলীকে নমিনেশন দিয়েছে। আামি তাদের উদ্দেশ্য বলবো নৌকা প্রতিক দেয়ার ক্ষমতা আদৌ আমার আছে কি? নৌকা দেয়ার মালিক যিনি উনি নারায়ণগঞ্জে আছেন। উনি দিলে সেটা যাবে গণভবনে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা মার্কা দিবে তিনিই নির্বাচন করবেন। ’


বিভাগ : রাজনীতি


নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও