আমি অভাগা পিতা রক্তের বিচার পেলাম না

সিটি করেসপন্ডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:১৩ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার

আমি অভাগা পিতা রক্তের বিচার পেলাম না

নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র হত্যার ৪ বছরে বাবা কামাল সিদ্দিকী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে একটি মোবাইল ও মাত্র ৭০০ টাকার জন্য শুভ্রকে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে পেশাদার ছিনতাইকারীরা। ঘটনার পর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি।

শুভ্রের বাবা ফেসবুকে লিখেন, বাবা শাহরিয়াজ, এক বছর পর আবার তোমার কদর বাড়লো। পত্রিকার অফিস থেকে তোমার মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চায়। ওদের ধন্যবাদ দিতে হয় তবুও ওরা বছরে একবার খোঁজ নেয়। যাদের পাশের টেবিলে বসে তুমিও এক সময় সত্যের পক্ষে কলম চালাতে তারা এখন অনেকে তোমাকে ভুলে গেছে। আবার অনেকে মনেও রেখেছে। এক এক করে তারাও একদিন হয়ত ভুলে যাবে।

‘‘আহ আমরাও যদি ভুলে যেতে পারতাম! তাহলে পরম তৃপ্তিতে ঘুমাতে পারতাম। অনেক পছন্দের খাবার খেতে পারতাম। মন খুলে হাসতে পারতাম। এক সময় তুমি ছিলে ;বাড়ি ছিল না। আজ বাড়ি আছে তুমি নেই। থাকে থাকে তোমার পাঠ্যবই আছে। বইয়ে সুন্দর হস্তাক্ষরে তোমার স্বাক্ষর আছে। তোমার ডাইরি আছে। ডাইরিতে তোমার স্বপ্ন আছে। স্বপ্নের আলপনা কেন জানি ধূসর হয়ে গেছে। না ইচ্ছে করেই ডাইরিটা পড়িনা। তোমার সংগ্রহের অতি প্রিয় লেখকের বইগুলো পাঠক খোঁজে। মনের অজান্তে নেড়ে চেড়ে রেখে দেই । মলাট খুলিনা। যদি তোমার হাতের স্পর্শ মুছে যায়।’’

‘‘তোমার আদরের বোন এখন অনেক বড় হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিকালে তোমারা তিন ভাই বোন খুব হাসি তামাসা করছিলে। তোমার ছোট বোন হাসেতে হাসতে তোমার কাছে তোমার বাটন মোবাইল আব্দার করেছিল তুমি সঙ্গে সঙ্গেই দিয়েছিলে। তারপর ঘর হতে বের হলে আর ফিরে এলে না। জানো বাবা, ও এখন শ্বশুর বাড়ি। প্রায়ই তোমাকে স্বপ্ন দেখে। তোমাদের সখ্য তো শেকড়ের। ইচ্ছা করলেই স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া যায় না। বিয়ের আসরে সে অনেক কেঁদে ছিল। আমিও অনেক কেঁদেছি।’’

‘‘এত লোক সমাগমেও একটা শূন্যতা আমাদের শত আনন্দের বাতি ঘরটি নিষ্প্রভ করে দিয়েছে। কচি ডাগর চোখে ও তোমাকে খুঁজেছে। জানো বাবা, তুমি চলে গেলে। তোমার বোন শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। জোড় হারা ছোট ভাই টি বড় একা হয়ে গেল। আমাদের পরিবারটি শুধু ক্ষুদ্র হতে চলেছে। হয়ত অতি তাড়াতাড়ি বিন্দুতে পরিণত হবে। তাতে দুঃখ নেই। দুঃখ একটা তুমি জুলুমের শিকার হলে। আমি অভাগা পিতা মানুষের দরবারে তোমার রক্তের বিচার পেলাম না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমার শাহাদাত কবুল করুন।’’

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ফতুল্লার লালপুরের বাসা থেকে বের হয় শাহরিয়াজ শুভ্র। সে সরকারি তোলারাম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও স্থানীয় একটি পত্রিকায় কর্মরত ছিল। তার এক বন্ধু ঈদের ছুটি শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন সেই রাতে। ভোরে নিরাপদে যাতে গন্তব্যে পৌছাতে পারে সেজন্য তাকে সঙ্গ দিতে বের হয়েছিলো শুভ্র। সাইনবোর্ড যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিবু মার্কেট থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠে বসেছিলো সে। এরপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় শুভ্র।

পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুঁইগড় কড়ইতলা এলাকার একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত সেই যুবকের জামা কাপড় দেখে বাবা মা শনাক্ত করতে পারে, এটিই সেই শাহরিয়াজ শুভ্র।



নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও