জোর করে হকারদের রুখতে পারবেন না, দোকান বিক্রি সত্য না : হাফিজুল
সিটি করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১২:০৮ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার

হকার্স মার্কেটের দোকান কোন মালিক উচ্চদামে বিক্রয় করে নাই। ৬-৭ লাখ টাকায় বিক্রি করার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন হকার্স নেতা সিপিবি এবং ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, হকাররা একজন আরেক জনের কাছে দিয়ে চলে এসেছে অল্পস্বল্প টাকার বিনিময়ে। হ্যান্ডওভার হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকায়। অবশ্য সামনের দোকানগুলো লাখ টাকা কোনটা। আপনারা যারা এ বিষয়ে কথা উঠিয়েছেন, তাদের বলবো উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করতে। যারা এমন বক্তব্য দেয় তারা গরিবদের দাবিয়ে রাখার জন্য এ অভিযোগ করছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বলার জন্য এ কথা বলা হচ্ছে। হকার্স মার্কেটটি যে াবে নির্মিত হয়েছে তার ভেতরে ত্রুটি রয়েছে। দোকানদার বসার জায়গা নাই এমন দোকান নির্মান করা হয়েছে মার্কেটটিতে। তাই সেখানে ব্যবসা করে হকাররা লাভবান হয়নি বলে মন্তব্য করেনা তিনি।
রোববার ১৪ জানুয়ারী রাত সাড়ে ৯টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জের সংবাদ বিশ্লেষন নিয়ে বিশেষ আয়োজন ‘টক অব দ্যা নারায়ণগঞ্জ’ এর আলোচনায় এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সংবাদকর্মী আবুল হাসান।
শ্রমিক নেতা হাফিজুল ইসলাম বলেন, তিনটি মৌসুমে হকাররা ব্যবসা করে থাকেন। যারা বিষয়টি বিবেচনা রাখেন না, তারা এই সময় এসে উচ্ছেদ করেন। তার মধ্যে একটি মৌসুম হচ্ছে এই শীত মৌসুম। অথচ এই মৌসুমগুলোতেই হাকারদের নিয়ে টানাহেচরা করা হয়।
যানজট এবং হকারদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হকাররা যেদিন অনশন করতে শহীদ মিনারে শুয়ে ছিলেন, তখন সড়কে কেন যানজট সৃষ্টি হয়েছে। একটি বিষয় সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি নতুন সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাফিজ।
এসময় তিনি দাবি তুলেন হকার পুনর্বাসনের। তিনি বলেন, হকারদের পরিবারের কথা চিন্তা করে তাদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে পুনর্বাসন করতে হবে। মেহনতি মানুষের পক্ষে সকল বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।
তিনি বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তিন কাউন্সিলরকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, ছুটিরদিন শুক্রবার এবং শনিবার বিকালে হকার বসবে। ফুটপাতের এক পাশে বসবে, নিষিদ্ধ এলাকায় বসবে না। কোন ভাবেই যেন পথচারীদের সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে হকার ভালভাবেই বসে ব্যবসা করছিল। ঠিক সেই সময়ে হকার উচ্ছেদ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাবে না বলে হুশিয়ার উচ্চারন করনে।
তিনি বলেন, জোর করে হকারদের রুখতে পারবেন না। হকারদের ধৈর্য ক্ষমতা থাকবে বলে মনে হয় না। এই সময়ে কথা শুনানোর মত সুযোগ নেতাদের মধ্যে থাকবে না হয়তো। পুলিশ পারে নাই, বিডিআর পারেনাই। যারা সারা জীবন আন্দোলন করেছে তারা এই সময় এসে ব্যাতিকক্রম হবে না। নরায়ণগঞ্জে ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। এর আগের আন্দোলনগুলো দেখলে বুঝা যাবে। আমরা সেই যায়গায় যেতে চাই না। শান্তি বজায় থাকুক।
প্রসঙ্গত এর আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, হকার্স মার্কেটে হকারদের পুনর্বাসন করা হলেও ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
সবশেষ সিটি এমপি সেলিম ওসমানকে দেওয়া চিঠিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহতেশামুল হক উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার্স সমস্যা দীর্ঘদিনের পঞ্জিভূত সমস্যা। তাদের সমস্যা নিরসনে বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সব সময়ে আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করে আসছে। তারই ধারবাহিকতায় ২০০৮ সালে চাষাঢ়ায় ৫০ শতাংশ জায়গার উপর একটি হকার্স মার্কেট নির্মাণ করে সেখানে ৬৫৮ জন হকারকে দোকান দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়। তখন তালিকার বাইরে ফুটপাতে হকার ছিল না। কিন্তু পুনর্বাসিত জায়গায় হকারগণ ব্যবসা পরিচালনা না করে শহর জুড়ে ফুটপাতের সম্পূর্ণ অংশ এবং রাস্তার বেশ কিছু অংশ দখল করে ব্যবসা করছে। ফলে জনসাধারণের ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসকল বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভায় আলোচনা হয়েছে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় সিটি করপোরেশনকে দায়ী করে আসছে। সুতরাং সার্বিক পর্যালোচনায় ফুটপাত দিয়ে জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচল ও যানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে হকারদের ফুটপাতে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়া সম্ভব না। এ অবস্থায় আপনার মানবিক উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের বর্ধিতাংশ, জামতলা ঈদ গাঁ মাঠ, নগর ভবনের সম্মুখের অংশ ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পেছনে রাজউকের কার পার্কিংয়ের জায়গায় প্রতিদিন বিকেল ৫টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত হকার বসানোর বিষয়ে নির্দেশক্রম সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।