অস্ত্র প্রদর্শণে ভীতি ‘বিব্রত’ চন্দন শীল
সিটি করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৯:৫০ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার

‘নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনাটি দুঃখজনক, দুর্ভাগ্য এবং বিব্রতকর’ মন্তব্য করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে বিব্রত করছে। হতাশ করেছে এ ঘটনা। আওয়ামীলীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হয়েছে। এক নেতা আরেক নেতাকে হত্যার অভিযুক্ত হচ্ছেন। যারা সুস্থ্য রাজনীতি করেন তাদের কছে এহেন আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। সর্বস্তরের মানুষ এ দৃশ্যকে ভালভাবে দেখছে না। এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে মারামারি করতে হবে কেউকে হত্যার চেষ্টা করতে হবে।
মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংবাদ নিয়ে নিউজ নারায়ণগঞ্জের বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান ‘টক অব দ্যা নারায়ণগঞ্জ’ এর আলোচনায় এ মন্তব্য করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল। আলোচনার বিষয় ছিল হকার ইস্যু, রাজনীতি ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন দৈনিক সমকালের সাংবাদিক এম এ খান মিঠু।
তিনি বলেন, কামালউদ্দিন মৃধার মত নেতারা বিএনপির হয়েও আওয়ামীলীগের উপকমিটিতে ঢুকে গেছে। এরা ঢুকে নেতাদের বিভ্রান্ত করছে। অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকে যাচ্ছে। হাইব্রিড ঢুকে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে হকার ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনার দিন সেখানে শিবির চিহ্নিত ক্যাডার, মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা যোগ দিয়েছিল।
‘কেন্দ্র থেকে কমিটি চাপিয়ে দেয়ার বিষয় ভাল হয় না, তাই এই হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ। দলে গনতন্ত্র চর্চা নাই। সুস্থ্যতা নাই। পূর্ব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতার মূল্যায়ন হচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে অরাজনৈতিক ব্যাক্তিরা চলে আসলে এর চেয়ে ভাল কিছুই হবে না। বিভ্রান্তিকর অবস্থা হবে।’ আলোচনায় যোগ করেন চন্দন শীল যিনি একই সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা কমিটিরও সভাপতি।
চন্দন শীল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ঐতিহ্য রয়েছে। আওয়ামীলীগের ঘাঁটিকে দুর্বল করার জন্য জামায়াত ও শিবির সহ বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামীলীগ কেউ কেউ তাদের পথ করে দিচ্ছে। যেহেতু আদর্শিক রাজনীতি চর্চা হচ্ছে না, যে পদ পাচ্ছে সে তাঁর দল ভারি করার জন্য নিচ্ছে। যাকে তাকেই সাথে নিচ্ছে, জেনে শুনেই নিচ্ছে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে মাঠে নামবে ব্যবস্থা নিবে। তখন কোন হাইব্রিড, ভূঁইফোড় নেতা বিলীন হয়ে যাবে।
তৈমূর আলম খন্দকারের গ্রেফতারের ঘটনার বিষয়ে চন্দন শীল বলেন, তার নামে যদি ওয়ারেন্ট না থাকে তবে অবশ্যই ঠিক হয়নি। আর যদি ওয়ারেন্ট থাকে তবে আগেই আইনগত বিধি পালন করা পুলিশের উচিত ছিল। এমন যদি হয় তাবে তার অনেক আগেই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আইন না মানা অনেকের স্বভাব হয়ে উঠেছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগের এ নেতা বলেন, সেখানে অনেক পত্রিকার সাংবাদিক সদস্য হিসেবে নাই। আবার সদস্যদের অনেকেই আছেন যারা কোন পত্রিকায় নাই। সেই সংগঠনের সভাপতি রয়েছে কুখ্যাত রাজাকারের সন্তান। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। তার বাবার দায়িত্ব জেনিটিক ভাবে আসবেই। এই জায়গায় তাকে তা মানতেই হবে। সরকারী সিদ্ধান্তে ২০১০ সালে রাজাকার তালিকা করার সভা হয়েছিল। বর্তমানে বিক্ষিপ্ত ভাবে নানান জনের নাম শোনা যাচ্ছে। কার্যকরী তালিকা করা দরকার। সাধ্যমত তথ্য দিয়েছি সে সময়। আবার চাইলে দেয়া যাবে। তবে এই তালিকা স্পষ্ট হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে আওয়ামীলীগের এ নেতা বলেন, মেয়র আইভী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সৃষ্টিকর্তার কছে কৃতজ্ঞ। তবে যদি অন্যকিছু ঘটতো তাহলে অনেক প্রশ্ন উঠতো, উঠতেই থাকতো। বিষয়টি স্বস্তির ব্যাপার।
হকার প্রসঙ্গে এ নেতা মনে করেন, সবার আগে মানবিক দিক বিবেচনা করে কাজ করতে হবে। হকার দেশের মানুষ, রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে পারলে হকারদের জায়গা দিতে পারবোনা কেন। হকার উচ্ছেদের সময় দিতে হবে। দলের কথা বলেন তা হলে বলতে হবে মেয়র সবার, তবে দলের বিষয় উঠলে তিনি দলের নেত্রী। হকার ইস্যুতে যে ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনার দায়িত্ব দল নিবে না। তৃনমূলের পছন্দ ছিল আনোয়ার হোসেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে আইভী। মেয়র যদি আওয়ামীলীগের মনে করনে তাহলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নামা তার ঠিক হবে না।
অস্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে চন্দন শীল বলেন, বৈধ আর অবৈধ হউক অস্ত্র প্রদর্শণ আমাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেছে। পুলিশ এতো দিন পর হলেও কেন তাদের গ্রেফতার করছে না সেটাও প্রশ্ন। নিয়াজুল, সুফিয়ান, সুমনের অস্ত্র কেন উদ্ধার করছে না। অস্ত্রের যে প্রদর্শন হয়েছে, তা কেন তদন্ত হচ্ছে না। নিরপেক্ষ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
‘দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আরেকজন সাহস পাচ্ছে’ আলোচনায় বলেন চন্দন শীল। সিনিয়র এ নেতা আরো বলেন, শন্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ যে বিরুপ অবস্থান আছে তাই দেশের মানুষ যেন খারাপ কোন ধারণা না পায় আমাদর বক্তব্যে। যারা যার অবস্থান থেকে যেন ভাল ধারণা পায় সেই অনুরোধ রাখেন সবার মাঝে।