দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিতে একমত ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি
সিটি করেসপন্ডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৮:৫৩ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু বলেছেন, বিএনপির সময় অত্যাচার-নির্যাতনের কারনে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কেউ ঘরে থাকতে পারে নাই। আমরা বাড়িতে থাকতে পারি নাই। জান বাঁচানো ফরজ। সেই জান বাঁচাতে আমরা এলাকা ছাড়া হয়ে গেছিলাম, কেউ ঘর ছাড়া হয়েছে, কেউ দেশ ছাড়া হয়েছে। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপির উপর কোন অত্যাচার করা হয়নি। তবে, যারা অন্যায় করেছে আগুন সন্ত্রাসী করেছে, বাস পুড়িয়েছে তাদের কোন ছাড় নাই। আমরা নারায়ণগঞ্জের সবাইকে চিনি কিনা সেটা বড় কথা নয়। আইনের কাছে কে সন্ত্রাসী তা আইনিই বলে দিবে। কেউ অন্যায় করলে আইন তার নিজস্ব গতিতে ব্যবস্থা নিবে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এম এইচ মামুন বলেছেন, বিএনপির উপর নির্যাতন হচ্ছে না কথাটা সঠিক নয়। বিএনপির কেউ জেলে, কেউ ঘর ছাড়া, তাদের বাচ্চারা অনাথের মত ঘরে পরে আছে। সরকারকে এর দায় নিতে হবে দেশে যে কালচার শুরু হয়েছে তা ভাল কোন কালচার নয়। চলুন দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ি। আওয়ামী লীগ এমন সাথে থাকলে সঙ্গি, সাথে না থাকলে জঙ্গি। নারায়ণগঞ্জের সবাই সবাইকে চিনে। আসামী ধরে কী ভাবে জবানবন্দী নেয়া হয় তা আমরা সবাই জানি। এর ভিত্তিতে বিএনপির কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। একজন সাবেক সংসদ সদস্যর সন্তান আশা আমাদের সামনেই বেড়ে উঠেছে। সেকি অস্ত্র নিয়ে চলার কথা। আমাদের বিশ্বাস হয় না।
৩ নভেম্বর শনিবার রাত ১০টায় নারায়ণগঞ্জে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিউজ নারায়ণগঞ্জের বিশেষ লাইভ টক শো ‘নারায়ণগঞ্জ কথন’ এ আলোচক হিসেবে একথা বলেন তারা। নারায়ণগঞ্জ কথনের ৫০ তম পর্বে বিষয় ছিল ছাত্র রাজনীতির সেকাল-একাল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এম এইচ মামুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন তানভীর হোসেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু আরো বলেন, বিএনপির সবাই খারাপ, আওয়ামী লীগের সবাই ভালো তা আমি বলবো না। বিএনপির রাজীব ছাত্র সংসদের ভিপি পদ দখল করেছে সে সময়। তারা জাহানারা ইমামের নামের উপর কালি লেপন করেছে। এতেই বুঝা যায় তারা কতটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। এটা যারা করেছে তারা আমাদের কোন ভাবেই বি-টিম নয়। বি-টিম বলতে ছাত্রলীগের কোন টিম নাই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপিতে স্বীকৃত অস্ত্রবাজ রয়েছে। আগুনে গাড়ী পোড়ানোর মামলার আসামী হলে সে বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে। নেতৃত্ব শূন্য করার রাজনীতি বিএনপি। জেল হত্যার ঘটনার মাধ্যমেই শুরু। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা তার প্রমাণ।
উন্নয়নের জন্য সকলকে এক মঞ্চে আসা উচিত। শেখ হাসিনার উন্নয়নে সবাইকে স্বাগতম। কেউ আসতে চাইলে আমরা ফেলেদিব না। ছাত্র সংসদ এর নির্বাচনে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।
থানা পর্যায়ে নতুন কমিটি না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি কাজ করেছে। তারা ব্যর্থ হয়নি। তারা সময় অনুযায়ী কাজ করেছে। দেশের পরিস্থিতির কারনে থানায় কমিটি নতুন করে দিতে পারে নাই বলে মনে করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সংসদ সদস্য সারা বাংলাদেশে উদাহরন সৃষ্টি করেছে। আমরাও সড়কের শৃঙ্খলা আনতে রাস্তায় নেমে কাজ করেছি। সাইনবোর্ডে ছাত্রীদের উপর যে নির্যাতনের কথা উঠেছে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কাজ চলছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে তৃতীয় পক্ষ তৎপর রয়েছে। তারাই এসব কালি লেপনের কাজ করেছে। সেই পক্ষই ছাত্রলীগ রাস্তায় নামার পর খালি ট্রাক শহরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাদের ভাল উদ্যোগ নস্যাৎ করতে চেয়েছে। জনগন তা জানে কারা এ কাজ করেছে। প্রশাসন তাদের খুজে বের করার কাজটিকে গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। জনগণের সমনে প্রকাশ করা উচিত প্রশাসনের।
রাতারাতি ব্যবসায়ী হওয়া প্রসঙ্গে নিপু বলেন, চেম্বার এর পরিচালক থাকলেও ছাত্র থাকাকালীন ঘরেই থাকতে পারি নাই। ব্যবসা তখন কী ভাবে করবো। তবে ব্যবসা হালাল তাই তা করতে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, যারা অপরাধী না তাদরে কোন ক্ষতি হবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে যাদেরই প্রার্থী করা হবে যাকে শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিবে তার পেছনেই কাজ করবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এম এইচ মামুন বলেন, আওয়ামী লীগের যেই দুঃশাসন চলছে তার জন্য দলের কোন স্বাভাবিক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। মানবেতর জীবন যাপন করছে ছাত্র নেতারা। ছাত্রদলের নতুন কমিটি কাজ করতে পারছে না। কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরেই সভাপতি জেলে চলেগেছে। তারা যেহেতু ছাত্র তাই তাদের উক্তি যথার্থ হতে সময় লাগবে। ভুল করতেই পারে। তবে এর জন্য অস্ত্র হাতে দিয়ে গ্রেফতার, কোন ভাবেই কাম্য নয়। জনস্বার্থে কী কাজ করবে নিজের স্বার্থেই কাজ করতে পারছে না ছাত্র নেতারা।
তিনি নিপুর কাছে আবেদন করে বলেন, সবাইকে নয় যারা ছাত্র রাজনীতি করেছে তাদের ফিরিয়ে আনেন শহরে। রাজীব এবং আশার বাড়িতে যান দেখেন কী অবস্থায় আছে। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে ভুল করলে আপনারাও সেই ভুল করবেন না। কলেজ ভিত্তিক রাজনীতি হলে ছাত্রনেতা তৈরী হবে। এভাবে ভিপিরা রাজনীতিতে নতুন ধারা তৈরী করতে পারে। এক সময় যারা ছাত্র সংসদে ছিল তারাই এখন জেলায় মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিএনপি বলেন আর আওয়ামী লীগ বলেন দু’দলেই তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের উচিত ছাত্র সংসদগুলোতে নির্বাচন দেয়া। আমাদের সময় প্রিন্সিপালের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে ডাকা হয়েছে নির্বাচনের সুযোগ নিতে বলা হয়েছে। জিএম আরাফাত এর প্রমাণ।
সাবেক এই ছাত্রদল নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের বিরোধ নিজেদের মধ্যে। যা বিবি রোডে দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। আপনারা মেয়র-এমপি নিজেদের মধ্যেইতো বিরোধ জিইয়ে রেখেছেন। নিজেরাইতো বসছেন না। সমস্যা সমাধানে আমদের কেন বলতে হবে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, এক পক্ষকে আপনি ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন আর অন্য কাউকে প্রচার চালাতে দিচ্ছেন না। এটা কেমন গণতন্ত্র। নির্বাচনের কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।