যা বললেন লিপি ওসমান (ভিডিও)
সিটি করেসপন্ডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১১:০৩ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি বলেছেন, শামীম ওসমান একজন ভাল মানুষ। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এমন ভালো মানুষের পক্ষে ভোটার হিসেবে, একজন বাসিন্দা হিসেবে, সচেতন মানুষ হিসেবে এবং দেশের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব মনে করে সবারই কাজ করা উচিত। তাঁর পক্ষে ভোটের মাঠে অনেক সাড়া পাচ্ছি। এলাকার উন্নয়ন, মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করায় এবং মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করায় তার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ভোটাররা যথেষ্ট স্মার্ট এবং সচেতন। তারা বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমানকে চায়। যদি কোন প্রকার ষড়যন্ত্র না হয়, উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা তাদের ভোটকে আমানত মনে করে ভোট দিবে।
৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে নিউজ নারায়ণগঞ্জের বিশেষ লাইভ টক শো ‘শীতল জলের গল্প’ একথা বলেন তিনি। আলোচনার বিষয় ছিল নির্বাচন ও নারীদের ভূমিকা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সাবিত আল হাসান।
সালমা ওসমান লিপি বলেন, একেএম শামীম ওসমান একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য কাজ করেন। সব সময়ই মানুষের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। যখন কোন মানুষ থেকে ভাল কিছু শুনতে পান বাসায় গিয়ে আমাদের বলেন। এতটুকুই হচ্ছে জীবনে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার। আর নেগেটিভ বিষয়গুলো সংস্কার করে নেন। সমালোচনা কানে আসলে তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করেন। যদি মনে করেন তা সঠিক, তাহলে তিনি ওই কাজ থেকে ফিরে আসেন। ভালো খারাপ দুটি মিলেই মানুষ। ভুল করে না যে, সে শয়তান না হয় ফেরশতা। যার কোনটাই আমরা নই। তাই শুধরাতে হবে আমাদের। তবে মিথ্যা হলে কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে আমাদের পরিবারের কেউ তেমন আসি না। তবে শামীম ওসমানকে আমরা সহযোগিতা করি। ছেলে অয়ন ওসমানও তেমন। তাই তার আরো প্রতিষ্ঠিত এবং পরিপক্ক হতে হবে। রাজনীতিতে আসার আগে দেশকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। যখন সে ভালবাসতে পারবে তখন সে রাজনীতিতে আসতে পারবে। তার আগে নয়। কারণ আমরা মনে করি রাজনীতি কোন ব্যবসা হতে পারে না। এটা একটি সেবা, দেশকে ভালবাসা।
শামীম ওসমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে গিয়ে লিপি ওসমান বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসলে চিকিৎসা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করবেন। এ বিষয়ে অনেক দূর কাজ এগিয়ে রেখেছেন। এখনো তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ করবেন।
তিনি বলেন, প্রতিদ্ধন্ধী তো প্রতিদ্ধন্ধী। এর আর ভালো মন্দ কী। প্রতিদ্ধন্ধীকে প্রতিদ্ধন্ধী হিসেবেই নিতে হবে বলে মত দেন তিনি।
দুখঃকষ্টের দিন স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, হিরামহলে আগুন দিয়েছে। জামতলার বাড়িতে গুলি করেছে। শামীম ওসমানের মামা শ্বশুরের কারখানায় হামলা হয়েছে। তার পরও শামীম ওসমান প্রতিশোধ নিতে চায়নি। তিনি মনে করেন একটি প্রতিশোধ আরেকটি প্রতিশোধকে টেনে আনে। এ বিষয়ে কোন প্রকার মামলা করা হয়নি।
লিপি বলেন, দুর্বলরা ক্ষমা করতে পারে না। শামীম ওসমান ক্ষমা করতে পারেন। তিনি এ বিষয়ে শক্তিশালী। তিনি সহজে মানুষকে ক্ষমা করতে পারেন। চাষাড়া বোমা হামলা দেখেছি। তখন আমাদের কাছে মনে হয়েছে কেয়ামত এর মত। মানুষের ছিন্ন ভিন্ন দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বীভৎস চিত্র। তার পরও তিনি তার ক্ষমাকে ধরে রেখেছেন। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কি না তা বিপরীত পক্ষের ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে। তারা যদি প্রতিশোধপরায়ন হয় তাহলে তো আর এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে না বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, আমার একটাই অস্ত্র, একটাই আশ্রয়। তা হচ্ছে আমার জায়নামাজ। আমি সেখানেই থাকি। যতই কষ্ট আসুক। তা আমাকে কষ্ট দিলেও কাবু করতে পারে না। বোমা হামলার পরের সময়গুলোকে মনে করলে মানসিক যন্ত্রনার কথা মনে হয়। সে সময় মনে হতো আমাদের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়েছে। কোন চিৎকার করতে পারি নাই।
শামীম ওসমানের কাছে দলের কর্মীরা তার সন্তানের মত। তারা মাঝে মাঝে ক্ষুব্ধ হয়। কষ্ট পায়। তার পরও তার নেতা হিসেবে শামীম ওসমান হামলাকারীদের উপর প্রতিশোধ নেয় না, ধৈর্য ধরে।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলেন, চিত্র পাল্টাচ্ছে। এখন নাই। তবে এক সময় নারীরা সংসদ সদস্য হিসেবে আসবে। নারীদের চিত্র পাল্টাবে।
নিজের প্রসঙ্গে লিপি ওসমান বলেন, মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে ছোট বেলার কথা মনে করি। মনটা ভাল হয়ে যায়। স্কুলে ব্যাডমিন্টন খেলতাম, ৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, ছাত্র জীবনে বান্ধবীদের সঙ্গে মজা মাস্তি করতাম। সে সময়গুলো স্মরণ করে এখনো মজা পাই। সেই বান্ধবীদের সঙ্গে এখনো আড্ডা দেই।
শামীম ওসমানের সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের ডাক দিতে শামীম ওসমান মহিলা কলেজে আসতেন। বেশির ভাগ সময় আসলেই ক্লাস বন্ধ হয়ে যেত। ছুটির একটি আনন্দ পেতাম। তার কথার ফাঁকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসতাম। অরাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠার কারণে প্রায়ই চলে আসতাম।
‘‘ওসমান পরিবার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার। এ পরিবারে এসে প্রথমে ভয় পেতাম। তবে শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব সাপোর্ট দিয়েছে। রাজনৈতিক বই পড়ায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেছি। ৭৫ এ বেড়ে উঠার কারনে রাজনীতি সম্পর্কে তখন একটা বিরূপ ধারণা সবার মধ্যে ছিল। তবে তা কাটিয়ে উঠেছি ওসমান পরিবারের কারনে। সবাই আমাকে সাহায্য করায় এটা সম্ভব হয়েছে’’ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজনীতির শামীম ওসমান এবং পরিবারের শামীম ওসমান সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দুইটি পরিচয়ে যেমন তফাৎ শামীম ওসমানে তেমন তফাৎ। পরিবারে তিনি শিশুসুলভ একটি ভাব জমিয়ে রাখেন। বাসায় যখন তিনি থাকেন তখন বাসায় প্রাণ ফিরে পায়। সবাই তাকে নিয়ে আনন্দ করি। সেও মজা করে সবার সঙ্গে।
লিপি বলেন, ‘আমি নিজেও সবার সঙ্গে বন্ধু সম্পর্ক বজায় রাখি। কোরআনের অর্থ পরে সবার সঙ্গে শেয়ার করি। সারাদিন কে কোথায় কী করলো তা নিয়ে গল্প করি। মজা হয় পরিবারে। সবার সঙ্গে সবার বন্ধু ভাব।’