‘ব্যক্তি আকরামের ভোট ব্যাংকে যুক্ত হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোট’
সিটি করেসপন্ডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৮:২০ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নাগরিক ঐক্য এর উপদেষ্টা এস এম আকরাম বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে মনে করি না। আর আদর্শ। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শ কি সেই অর্থে রয়েছে। বা আদর্শের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ কী করা হয়। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির আদর্শের তফাৎ কি খুব বেশি।
১০ ডিসেম্বর সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিউজ নারায়ণগঞ্জের বিশেষ লাইভ টক শো ‘নারায়ণগঞ্জ কথন’ এ আলোচক হিসেবে একথা বলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ কথনের ৫৫ তম পর্বে বিষয় ছিল ভোটের লড়াই। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন তানভীর হোসেন।
এস এম আকরাম বলেন, সবাই এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। দেশের এবং মানুষের অনেক সমস্যা থাকলেও মানুষ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। দেশ নির্বাচনে প্রবেশ করেছে। আমাদের প্রস্তুতি ভাল, তবে সময় কম হয়ে গেছে। আসন বন্টন নিয়ে সময় বেশি লেগে গেছে। এখন সব কিছু নির্ভর করে ভোটাররা কি চায়।
নৌকা, আনারস, ধানের শীষ। একেক সময় একক প্রতীকের সঙ্গে থাকা আকরাম বলেন, আমার নিজস্ব পরিচয় আছে। আমি কোন ভিন্ন পরিচয়ে আসিনি। ব্যক্তি আকরামকে শহর-বন্দর এর মানুষ চেনে। এর আগেও আমি সংসদ সদস্য ছিলাম। কয়েকবার নির্বাচন করেছি। আমাকে বাসিন্দারা দেখেছে। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে চেনে। তবে মার্কায় পরিবর্তন এসেছে। এই মার্কা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী হয়েছে। কোন চিন্তাধারা বা মতামতে পরিবর্তন আসেনি।
ধানের শীষে ব্যাক্তি আকরাম হারিয়ে যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে আমার সমর্থক ও কর্মী বৃদ্ধি হয়েছে। শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। একা যুদ্ধে যা করতে পরিনি এখন পারবো মত দেন এস এম আকরাম।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এ আহ্বায়ক বলেন, যখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি তখন ক্ষমতার বাইরে ছিল দলটি। দুর্বল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি, উদ্দেশ্য ছিল থিংট্যাংক এর কাজ করার। ১৯৯৪ সালে যোগ দেই। ১৯৯৬ নির্বাচন করেছি আওয়ামী লীগে। তখন সংসদীয় চেয়ারম্যান হয়ে অনেক কাজ করেছি। যা রেকর্ড হয়ে আছে। এজন্য আমি গর্বিত। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে।
‘‘২০০৮ সালে মনোনয়ন দিয়েও আসনটি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগ আসন ছেড়ে দেয়। যা প্রয়োজন ছিল না। আমি ভিকটিম হয়ে যাই। জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ দেয়া হয়। পরে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলেও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলাম। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে তখন বিবেকের কাছে দায়ী হয়েছিলাম। সে দায় থেকেই আহ্বায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াই। দল আমাকে কোন শোকজ করে নাই। এমন কী এখন পর্যন্ত দল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। দল এর জন্য অনেক করেছি। তাই আক্ষেপ থাকবেই। তখন অনেক কাজ করেছি। জেলা আহ্বায়ক হলেও ইউনিয়ন কাউন্সিলেও আমি উপস্থিত হয়েছি।’’ বক্তব্যে যোগ করেন আকরাম।
প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, দল ছাড়ার পরই নতুন কিছু করার জন্য উন্নয়ন মুখি রাজনীতি শুরু করি। নাগরিক ঐক্য নামের একটি রাজনৈতিক দলের উপদেষ্টা হিসেবে আমি কাজ করছি।
আকরাম বলেন, বিএনপির পতাকা তলে যাইনি। নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই কৌশলগত কারণে ঐক্য হয়েছে। প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাও কৌশল। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আমাদের কথা পৌছাবে।
স্বাধীনতা প্রসঙ্গে এস এম আকরাম বলেন, দেশে বাক স্বাধীনতা নাই, গণতন্ত্র নাই, ভোটাধিকার নাই। এর প্রতিবাদে আনারস নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমাকে তখন জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে অসহায় অবস্থায় বন্দরবাসী আমাকে ভোট দিয়েছে তাই কৃতজ্ঞ। তবে এখন অসহায় নয়, দল আছে, জোট আছে। আমার প্রতি বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট সমর্থন করেছে, কাজ করেছে। আমার ভাবমূর্তির কারণে নির্বাচনে ভাল একটি ফলাফল আসবে।
তিনি বলেন, সারা দেশে নির্বাচন হচ্ছে এখন বিরোধী প্রার্থী আগের মত কিছু করতে পারবে না। তবে সরকার পরিচ্ছন্ন নির্বাচন কতটুকু চায়, তার উপর নির্ভর করবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। আমাদের নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনতে হবে।
এর বিকল্প আরো ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ার করে দেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, দেশে কী হবে তা জানি না। তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ বিজয়ী হবো। নিজের উপর একটু বেশিই আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তবে বিএনপির এখন যে অবস্থা তা থেকে উত্তরনের জন্য তাদের মাঠে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। কে প্রার্থী হয়েছে, তা দেখার সুযোগ নাই। কৌশলে বিএনপিকে এগিয়ে যেতে হবে। গত ৮ থেকে ১০ বছর যে হয়রানী হয়েছে তা থেকে বাঁচতে আরো কাজ করতে হবে বিএনপিকে। স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থেই এ নির্বাচনে যা দেয়া দরকার, তার থেকে বেশি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপির কাউন্সিলরদের প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির কাউন্সিলরদের একটা ভোট তাই তারা কোথায় গেল, কার মঞ্চে উঠলো সেটা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
এলাকায় থাকা প্রসঙ্গে বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদে ভূমিকা রাখবে। তাদের এলাকার সালিশ করার জন্য নির্বাচিত করা হয় না। তারা দেশের জন্য কাজ করবে। আমি সেই কাজে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবো সংসদ সদস্য হলে। এই এলাকার অনেক কাজ বাকী। তবে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, শীতলক্ষ্যা নদীর উপর যে ব্রীজ, তা আরো আগেই হতে পারতো। আমি থাকলে তা অনেক এগিয়ে হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘‘আমার বিরোধীরা অনেক কথা বলতেই পারে। তবে এলাকায় বসে থাকা সংসদ সদস্যদের কাজ নয়। আমি যতটুকু দরকার ততটুকু এলাকায় সময় দিয়েছি। যেহেতু ক্ষমতায় নাই সেহেতু দাওয়াত খাওয়া ছাড়া কী কাজ। তবে কোন সমস্যা বা কাজের জন্য আমার সঙ্গে যে কেউ কথা বলেছে, কাজ হয়েছে। তবে সময় সব সময় দেয়া হয়নি এটা অস্বীকার করতে পারবো না। এটা কোন অপরাধ নয় বলে মনে করেন তিনি।’’
এস এম আকরাম বলেন, আমার ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অনেক ভোট আছে। বিজয় হবেই আমার।
তবে এলাকাবাসীর কাছে বার্তা থাকবে, নির্বাচনে অংশ নিন, ভোট দেন। ভোট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবেন না। ভোট কেন্দ্রে সঠিক পরিবেশ এবং সঠিক নিয়ম পালনের জন্য কেন্দ্রে থাকতে হবে বলে আহ্বান জানান তিনি।