‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৮:০৪ পিএম, ৬ জুন ২০২০ শনিবার

বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের ‘খোকার সাধ’ কবিতাটি ছোটবেলায় পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বড় হয়ে শত দায়িত্ব কাঁধে আসার পর হয়তো অনেকে ভুলে যেতে পারেন। তবে কবিতাটির প্রথম চরণ ‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি’ মনে করিয়ে দিলে কাধে দায়িত্ব বা মাথায় চিন্তা থাকলেও পরের চরণগুলো মনে করিয়ে দিতে হবে না। সেই কবিতারই বিশেষ চরণ ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ কালে তরুণের দল জেগেছে। তাঁদের হাত ধরে করোনার মহামারি কাটিয়ে বাংলা মায়ের আকাশে নতুন সূর্য উকি দিবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ যত আন্দোলন সবগুলোরই সূচনা তরুণদের হাত ধরে। সম্প্রতি দেশে সর্বাধিক আলোচিত ‘কোটা আন্দোলন’ ও ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ এর সূচনাও হয়েছে তরুণদের হাত ধরেই। করোনা কালে তাই কি করে তরুণ সমাজ ঘড়ে বসে থাকে? করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাই শুরু থেকেই কেউ জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। কেউবা যানবাহন, অফিস-আদালতে জীবানুণাশক ছিটাচ্ছে। আবার কেউ বড়দের সহায়তায় ক্ষুধার্থের মুখে আহার তুলে দিতে মধ্য রাতে ছুটে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। তেমনি তিন করোনা যোদ্ধা তরুণকে নিয়ে নিউজ নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত ফেসবুক লাইভ টকশোতে উঠে এসেছে করোনাকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয়।
৬ জুন শনিবার রাত ১০ টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জের ফেসবুক লাইভ টকশো ‘করোনা মোকাবেলায় তরুণদের ভূমিকা’ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি শুভ দেব, বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন বিজয় ও ফেসবুক গ্রুপ নারায়ণগঞ্জস্থানের এডমিন আরেফিন রওশন হৃদয়। উপস্থাপনায় ছিলেন হাফসা আক্তার।
করোনাকালে নানান কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি শুভ দেব বলেন, ‘করোনার প্রথম থেকেই একটি স্লোগান চলছিল যে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে ঘর থেকে বাইরে গিয়ে যোদ্ধাতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু এখন যোদ্ধা হতে হলে ঘরে থাকতে হবে। এই কথাটি এক জায়গা থেকে ঠিক সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যেহেত ঘর থেকে বের হয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এবং আমরা একটি ছাত্র রাজনীতি করছি সেই ক্ষেত্রে আমাদের দায় যে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এমন পরিস্থিতিতে সেই ইচ্ছা থেকে সাধারণ মানুষকে পাশে নিয়ে করোনা মোকাবিলার জন্য আমরা নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা মাস্ক বিতরণ ও মাস্ক তৈরী করা শিখিয়েছি। পরবর্তিতে সচেতনতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে ফেস্টুন লাগাই। শ্রমজীবী মানুষের মাঝে হ্যান্ড ওয়াশ বিতরণ, ত্রাণ বিতরণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে লাল সার্কেল তৈরী করি। এছাড়া বাড়িতে এবং জরুরি সেবার জন্য খোলা অফিসগুলোতে গিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করেছি। শহরের সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দাঁড়িয়ে যানবাহনে জীবণুনাশক ছিটিয়েছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং থাকবে।’
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ‘নারায়ণগঞ্জস্থান’ এর এডমিন আরিফিন রওশন হৃদয় বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জস্থান শুধু একটি ফেসবুক গ্রুপ। এর মাধ্যমে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে একটি প্লাটফর্মে আনার জন্য কাজ করি। করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরেই কিন্তু নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ যখন বিপদে কিছু করার উদ্যোগ এমনিতেই চলে আসে। যখন দেখবো যে আমার পাশের বাসায়, আমার মহল্লায় বা আমার শহরের কেউ বিপদে আছে তাহলে এমনিতেই কিছু করার উৎসাহ তৈরী হয়। এই ভাবেই আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে অন্য অনেক সংগঠন কাজ করছিল। কিন্তু আমরা কাজ করতে পারিনি। এর দুইটি কারণ। প্রথমত আমাদের ধারণা ছিল করোনা পরিস্থিতি এক মাস বা দেড় মাসে যাবে না। তাই ওই সময়ে আমরা ফান্ড সংগ্রহে বেশি কাজ করি। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি যেহেতু দির্ঘমেয়াদী হবে তাই আমাদের কার্যক্রম যেন এক মাসেই শেষ না হয়ে যেন দির্ঘমেয়াদী হয়। সেই লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা প্রতিদিন এক বেলার আহারের ব্যবস্থা করি। রমজান মাসে ইফতার বিতরণ করি। এছাড়া ১০০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পরিকল্পনা থাকলেও অর্থ স্বল্পতার কারণে ৪৫০টি পরিবারকে এক সপ্তাহের জরুরি খাদ্য সহায়তা দেই। সেই সাথে শিশুখাদ্য ও ওষুধের মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বিতরণ করছি। এই কার্যক্রম এখনো চলমান আছে।’
বিডি ক্লিন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ইকবাল হোসেন বিজয় বলেন, ‘সবাই যদি ঘড়ে বসে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার জন্য কেউ থাকবে না। কবির ভাষায় যদি বলি ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে’ এই চিন্তাধারা থেকেই আমরা করোনা মোকাবিলায় কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ হই এবং কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিডি ক্লিন পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করে আসছে। প্রথম যখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আসে তখন থেকেই পরিকল্পনা করি কাজ করার জন্য। করোনা মোকাবিলায় মাস্ক বিতরণ যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটাই এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করি। কাউন্সিলর খোরশেদ সাহেব যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানো শুরু করেন। আমরা সেই কাজে সহযোগিতা করি। এছাড়া মসজিদ মন্দিরেও আমরা জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’