সফল ছাত্র আন্দোলন, বাস্তবায়নে ব্যর্থতা (ভিডিও)
স্টাফ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৭:৪৮ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্র আন্দোলন’ যে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল কলেজের ক্লাস রুমের পরিবর্তে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। হাতে বই খাতা আর কলমের বদলে ধরতে হয়েছিল ‘রাষ্ট্র মেরামত চলছে’ প্লে কার্ড। মুখে কবিতার বদলে উচ্চারিত হয়েছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় আলাদা লেন তৈরী করে, লাইসেন্স ও ফিটনেস চেক করার মাধ্যমে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল কোথায় সমস্যা এবং কিভাবে সমাধান করতে হবে। এই আন্দোলনের কারণে ‘হেলমেট বাহিনীর’ আক্রমনের শিকার হতে হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় গ্রেপ্তার হতে হয় বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে।
‘ছাত্র আন্দোলেন’কে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জেও বহু ঘটনা ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আওয়ামী লীগ নেতা গোপীনাথকে রোশানলের মুখে পড়তে হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের শরীরে পোড়া মবিল ছিটিয়ে দিয়েছিল পরিবহন শ্রমিকেরা। ভাঙচুর করা হয়েছিল বাস।
নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে কথা দিয়েছিলেন যে তাঁদের সকল দাবি মেনে দেওয়া হবে। এত কিছুর পর ছাত্র আন্দোলেনের দুই বছরের মাথায় সড়কে নৈরাজ্য কতটুকু কমেছে? শিক্ষার্থীদেরে দাবি কতটুকু বাস্তবায়ীত হয়েছে? কে-ই বা কতটুকু কথা রাখতে পেরেছে? এসব বিষয় উঠে এসেছে নিউজ নারায়ণগঞ্জের লাইভ টকশো অনুষ্ঠানে।
১০ আগস্ট সোমবার রাত ১০ টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জের আয়োজিত লাইভ টকশো ‘ছাত্র আন্দোলনের দুই বছর ও প্রাপ্তি’ অনুষ্ঠানে কথা বলতে যুক্ত ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় ছাত্র নেতা বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা মানিক মুনা, জেলা ছাত্র ইউনিয়নে সভাপতি শুভ বনিক ও নারী অধিকার কর্মী লিলিথ অন্তরা। সঞ্চালনায় ছিলেন হাফসা আক্তার।
লিলিথ অন্তরা বলেন, ‘আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নিরপাদ সড়কের নিশ্চয়তা, নিরাপদ সড়কের জন্য আইন প্রণয়ন, ট্রাফিক আইন যারা ভঙ্গ করছে তাঁদের শাস্তি। কিন্তু এখনো আমরা সড়কে কি দেখছি? আন্দোলনের সময় আমরা সড়কে এম্বুলেন্সের জন্য সড়কে আলাদা সারি করছে। সাইকেলের জন্য আলাদা সারি করছে। কিন্তু এর পরবর্তিতে আমরা আবার দেখলাম যে আগে যেভাবে চলছিল ঠিক সেইভাবেই চলার প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক ব্যবস্থা হাঁটছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাফিক আইন সপ্তাহ তৈরী করা হলো। কিন্তু আদৌ কতটুকু এই ট্রাফিক আইন সপ্তাহ এবং ট্রাফিক আইন শৃঙ্খলিতভাবে পরিচালতি হচ্ছে? যদি সঠিক ভাবে পরিচালিত হতো তাহলে সড়কে নতুন করে প্রাণ হারাতে দেখতাম না। কয়েকদনি আগে বাংলাদেশের পর্বতআরোহী রেশমা নাহার রত্মা সাইকেল চালাতে গিয়ে মাইক্রোবাস চাপায় মারা গেলো। আমরা যদি দেখি সড়কের সাইকেল লেনগুলোও কি ঠিক আছে? অথবা ছাত্র আন্দোলনের মূল স্পিরিট বা দাবি ছিল সেগুলো কি সঠিকভাবে পালিত হয়েছে? সেগুলো কিন্তু সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি বা পালিত হয়নি। ফলে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন যে আন্দোলন নিরাপদ সড়কের জন্য হয়েছিল। সে আন্দোলন অবশ্যই সফল হয়েছিল। কিন্তু আমাদের স্টেট পলিসির এপ্লায়ের জন্য রাষ্ট্র সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। যদি পারতো তাহলে রেশমা নাহার রত্মার সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতো না। ছাত্র আন্দোলন সফল হচ্ছে কিন্তু আন্দোলনগুলো রাষ্ট্রের জায়গা থেকে যেভাবে কার্যকর করার দায়িত্ব সেই কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি।’
ফারহানা মানিক মুনা বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় চালক দায়ি নাকি পথচারী দায়ি এখানে এক বাক্যে যদি বলতে চাই তাহলে আমি এক পক্ষকেও দায়ি করতে চাচ্ছি না। কারণ চালকদের ইজারা ভিত্তিক মজুরি দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সে দ্রুতগতি কিংবা ওভারটেকিংয়ের মধ্যে থাকে। কারণ সে যতবেশি ট্রিপ শেষ করতে পারবে তার ইনকাম তত বেশি হবে। এছাড়া সড়কের অসংখ্য জায়গায় চালকদের চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার যোগান যদি সে না করতে পারে নিশ্চিত ভাবেই সে পরিবহন চালাবে না। ফলে যখন চালকের মাথায় চাঁদার বোঝা চাঁপিয়ে দেওয়া হয় তখন তাকে এ ধরনের পরিস্থিতিতেই যেতে হয়’
‘অন্যদিকে সচেতনতার দিক থেকে যদি বলি তাহলে বলতে হয় যে চাষাঢ়ায় বিভিন্ন জায়গায় জেব্রা ক্রসিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর ব্যবহার সম্পর্কে খুব কম মানুষ জানে। জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থাপনাটা কিরকম সেটাও হয়তো অনেক ট্রাফিক পুলিশ জানে না। ফলে মানুষ যদি না জানে তাহলে সে আগের মতই চলতে থাকবে। এটাকে মানুষের অসচেতনতা বলা যায় না।
ছাত্র আন্দোলনের সফলতা প্রসঙ্গে শুভ বনিক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আই হেট পলিটিক্স চলে আসে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র আন্দোলনের মত এত বড় একটি আন্দোলন ঘটাতে পারে এটাই হচ্ছে বড় সফলতা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের সফলতার আরেকটি দিক হচ্ছে এই আন্দোলনের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন ছিল। কিন্তু এত সমর্থন পাওয়ার পরেও এই আন্দোলনের দাবিগুলো সঠিক ভাবে পূরণ হয়নি। এর জন্য ব্যর্থ রাষ্ট্র। ছাত্র আন্দোলন অবশ্যই সফল।’