ভালো নেই সংগ্রামী সনু রানী (ভিডিও)
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৮:৫১ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

সনু রানী দাস। নারায়ণগঞ্জের হরিজন সম্প্রদায়ের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। নারায়ণগঞ্জের দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার আইকন সনু রানী প্রচন্ড বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ২০০৬ সালে কলোনির মধ্যে প্রথম এসএসসি পাস করেন। ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) শেষ করার পর ২০১৪ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক (বিবিএস) করেন।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত সংগ্রামী সনু রানী এখন মোটেই ভালো নেই। একটি চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। সনুর দিকে আঙুল তুলে তাঁর সম্প্রদায়ের একটাই প্রশ্ন “এত পড়ালেখা করলা, টিভিতে আসলা তাতে কি হইছে? একটা চাকরি তো পাইলা না।”
২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জস্থান ফেসবুক গ্রুপের যৌথ আয়োজনে লাইভ টক শো ‘রেইজ অব নারায়ণগঞ্জ’ এর ‘প্রতিকূলতায় বেড়ে ওঠা সনু রানীর গল্প’ অনুষ্ঠানে আক্ষেপের স্বরেই নিজের ভালো না থাকার গল্প শুনিয়েছেন। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জসহ যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁদেরকে সনুদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সনু রানী দাস বলেন, ‘আমি যে সংস্থায় চাকরি করতাম সেই জায়গা থেকেই আমি বাইরে যেতে পেরেছি। ওনাদের অনেক সাপোর্ট ছিল। সেটা হচ্ছে দলিত নারী ফোরাম এবং বিডিআরএম। এরপর মিডিয়া আমার বিষয়গুলোকে যখন হাইলাইট করছে তখন অনেকে দেখেছে যে আমি বিদেশে গেছি। জাতিসংঘে বক্তব্য দিয়েছি। মিডিয়া আমার লাইফে যতটা ভালো করেছে। ততটাই আবার খারাপও করেছে। এখন আমাকে অনেকে বলে যে, “এত এত টিভিতে যাও। তাতে কি হইছে?” ভালো লাগার যেমন জায়গা তেমন খারাপও লাগে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কখনো ভাবি নাই যে আমি মিডিয়াতে আসবো। নিজের প্রশংসা করাটাও খারাপ বিষয়। আমি পড়াশোনা করেছি এটাতো সবাই জানে। আবার আলাদা করে বলব যে আমি ডিগ্রী করেছি, অনেক কষ্ট করে বের হয়ে আসছি। এটাতো বলার কোনো প্রয়োজন নাই। সবাই দেখছে। আমি তো জ্বলন্ত প্রমাণ। মিডিয়া আমার জন্য যত ভালো ততটাই খারাপ। এখন চলাচলের ক্ষেত্রেও আমার আত্মীয় স্বজনরা বলে যে, “এত এত টিভিতে যাও, কি হইছে? একটা চাকরি হইছে? একটা সরকারি চাকরি করো?” তখন কিন্তু অনেকটাই দুঃখ লাগে। আমার ভালো লাগে না।’
তিনি বলেন, ‘ছোটরাও আমাকে বলে যে, ‘আরে কাকি তুমি কত জায়গায় গেছ। আমরা তো এগুলো জীবনেও পাব না। আমাদের লাইফে তো এগুলোও আসবে না। কত মিডিয়াতে তুমি কথা বলছো। একটা চাকরি তোমার হয় নাই?’
তিনি বলেন, ‘এত কিছু হওয়ারা পরেও আমি যদি ফ্রাস্টেটেড হয়ে যাই। আমি যদি একটা জায়গায় দাঁড়াতে না পারি। এমন না যে আমি কিছু করি না। আমি কন্তিু একটা প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছি। আমার মত অনেক সনু আছে। অনেকে কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে। সবাই কিন্তু এনজিওর প্রতি ইন্টারেস্ট না। সবাই চায় ভালো চাকরি হোক। আমার মত মেয়েদের যদি ইনস্পায়ার না করে। আমাদের অভিভাবক বা বড় পর্যায়ে যারা আছে বা জনগনের প্রতিনিধিত্ব যারা করছেন। তাঁরা যদি একটু এগিয়ে না আসে। আমাদের মত মেয়েদের যদি একটু হাত ধরে উঠিয়ে না দেয় তাহলে কিন্তু সম্ভব না। কারণ দলিত সম্প্রদায় থেকে এত কষ্ট করে এত দূর আসা আবার চাকরির জন্য এত ফাইট করা। আমরা যদি কমিউনিটি থেকে হিন্দি ভাষি হয়েও এতদূর আসতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের এক্সট্রা অর্ডিনারি আছে। আপনারা যদি আমাদেরকে একটা চাকরির সুযোগ করে দেন আমরা ওইটাও খুব ভালো করে করতে পারব। এটা আমরা জোর করে বলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মত সনু অনেক আছে। তাঁরা কিন্তু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না ভালো চাকরি পাচ্ছে না বিধায় তাঁরা হাউজ ওয়াইফের জীবণ যাপন করছে। যেমন আমি ৬টা বছর পিছিয়ে গেলাম। কেন? বাচ্চা নারায়ণগঞ্জে, পরিবার নারায়ণগঞ্জে। ঢাকায়তো চাকরি করা সম্ভব না। একাটা মেয়ের অনেক দায়িত্ব আছে। বাচ্চা মানুষ করা, পরিবারকে সময় দেওয়া, সব কিছুই তাঁকে মেনটেইন করতে হয়। এখন আমি যদি চাকরির জন্য ফাইট করি। এটাও তো আমার কমিউনিটির জন্য ব্যাড ইফেক্ট হবে। কিভাবে? অনেকে বলবে যে, “ও এত পড়াশোনা করেছে ও তো পরিবারের কথা শোনে না। বাচ্চারেই পালন করছে না। ঢাকায় ঘুরে বেড়ায়।” একটা নারীর জন্য পরিবারটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাবা কিন্তু চাকরি করলেও কিছু হয় না। সকালে বের হলো রাতে আসলেও পরিবারের ক্ষতি হয় না। কিন্তু একটা মা যদি বের হয়ে যায়। আমি এত পড়াশোনা করলাম আমার বাচ্চা যদি পড়াশোনা না করে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হবে। আমার বাচ্চা যদি নষ্ট হয়ে যায় টাকা দিয়ে কি করব?’
তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রেই আমি বলছি যে দলিত নারীরা যেসব জায়গায় অবস্থান করছে তাঁরা যদি সেসব জায়গায় তাঁদের এবিলিটি অনুযায়ী যদি চাকরি পায়। যারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরা তাঁরা যদি একটু এগিয়ে আসে। তখন কিন্তু এই দলিত নারীরা অনেকটাই উপকৃত হবে। এবং আমাদের ইয়ং জেনারেশন যারা আছে। যারা আমাদেরকে ফলো করছে তাঁরা ভাববে যে, ‘পড়াশোনা করলে একটা জায়গায় দাঁড়াতে পারবো। পড়াশোনা ব্যার্থ হবে না।’