রাজাকারপুত্র মাকসুদ নৌকাপুড়ায়,বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানায়!

স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:০৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২০ রবিবার

রাজাকারপুত্র মাকসুদ নৌকাপুড়ায়,বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানায়!

নারায়ণগঞ্জে মহাজোটের রাজনীতিকে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নানা কোন্দলের রাজনীতিক বক্তব্যের পাশাপাশি রাজাকারপুত্র মাকসুদ চেয়ারম্যানের একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে দুই নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে।

এছাড়া রাজাকারপুত্র মাকসুদ চেয়ারম্যানকে প্রশ্রয়দাতা হিসেবে সাংসদ সেলিম ওসমানের নানা সমালোচনাও করেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে রাজাকারপুত্র হলে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে পারবেনা এমন কোন গঠনতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানান মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন।

১০ অক্টোবর শনিবার রাতে নিউজ নারায়ণগঞ্জের লাইভ টকশো অনুষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ কথনের ‘মহাজোটের রাজনীতি ও জাপার সঙ্গে দূরত্ব’ বিষয়ের আলোকে এরুপ নানা বক্তব্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন আরিফ হোসাইন কনক।

অনুষ্ঠানের শুরুতে লাঙ্গল প্রতিককে লাথি মেরে নামানোর ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল (ভিপি বাদল) ১৯৯৬ সালে নাজমা রহমান যখন নৌকা প্রতিক পেয়েছিলেন এবং প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান লাঙল প্রতিক পেয়েছিলেন। তখন চাষাঢ়া গোল চত্ত্বরের মোড়ে একটি নৌকা ছিল ভিপি বাদল ওই নৌকা নামিয়ে লাঙল উঠিয়েছিল। এই সেই বাদল যাকে পত্রপত্রিকায় এ কারণে লেখা হয় লাঙ্গল মার্কা আওয়ামীলীগ। কিছুদিন পূর্বে সেই বাদল ইউপি নির্বাচনের সবগুলো ইউনিয়নের নৌকা প্রতিক চায়। ভুতের মুখে রাম নাম। ধন্যবাদ সেই জন্য কারণ অনেকটা দেরিতে হলেও তার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। সেজন্য আমি বাদলকে ইঙ্গিত করে এই কথা বলেছি। এবং এর পাশাপাশি আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মীদের এই আহবান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, মহাজোটের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের কারণে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে হয়। তবে আমাদের প্রাণের দাবি ছিল এখনো আছে নৌকার দাবি। সবগুলো আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি থাকার কারণে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা রীতিমত মার খাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। এখানে কোন আওয়ামীলীগের এমপি থাকলে তারা নির্যাতিত হতো না। এবং আওয়ামী লীগের দ্বারা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়নি হবেও না।

জাহাঙ্গীর বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে লাঙ্গল বুঝি নাই নৌকা বুঝি নাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছে। আজকে প্রশ্ন রাখতে চাই, এমপি সেলিম ওসমান কি এক দিনের জন্যও ডেকেছে? আমরা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি তার পক্ষে কাজ করেছি কিন্তু উনি ডাকেনি। কোন দিন ডেকে বলেনি এই কাজগুলো করেন, কোন নির্দেশনা দেয়নি কিংবা খোঁজ খবর নেয়নি। এই আসনের যারা প্রকৃত আওয়ামীলীগের লোক আমরা কোথায় আছি, অনেক কষ্টে আছে। সেসব প্রকৃত আওয়ামীলীগের লোকদের তারা ডাকেনি। তো আমরা কার কাছে বিচার দিব। বাকি তিনটি আসনেও আওয়ামীলীগের এমপিরা সকল নেতাকর্মীদের নিয়ে একত্রে কাজ করছে। তাহলে কিভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেনা।

রাজাকারপুত্র ইস্যুতে বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের কারণে মুছাপুর ইউনিয়নের মাকসুদ চেয়ারম্যান রাজাকারপুত্র হয়েও তার অনুষ্ঠানের ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি লাগানোর স্পর্ধা পেয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু এখনো বলে, ‘এখানে চিহ্নিত করতে হবে রাজাকার কিংবা তার পরিবার সন্তনরা যেন আমার ছবি আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করতে না পারে। তারা যেন কোন প্রকার আমার দলে ঢুকতে না পারে। সবাইকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের হুশিয়ারী করে দিয়েছেন। চোখ কান খোলা রাখতে বলেছেন।’ রাজাকারপুত্র মাকসুদ চেয়ারম্যান মূলত বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে নিজের কাজ হাসিল করতে চাইছেন। আমি রাজাকারপুত্র মাকসুদকে ধিক্কার জানাই। রাজাকারপুত্র যেন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করতে না পারে এজন্য আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে নোটিশ ও নালিশ করবো। এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সেক্রেটারীকে আমি অবহিত করবো।

তিনি আরো বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে মাকসুদ চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নৌকা প্রতিক পানিতে ফেলে দিয়েছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগের ছেলেদের মারধর করেছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের প্রশ্রয়ে সাহস পেয়ে মাকসুদ চেয়ারম্যান নৌকা প্রতিক পুড়িয়ে দিয়েছিল, যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মেরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। মাকসুদের এতো ক্ষমতা নাই, এটা এমপি সাহেবের সাহসের কারণে এমনটা করেছে। সে রাজাকারের পুত্র রাজাকারই হবে। সে কখনো আওয়ামীলীগের পক্ষে কাজ করবেনা। স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করবেনা। স্বাধীনতার বিপক্ষে তারা কাজ করবে। সেই স্বাধীনতার প্রতিক নৌকা পুড়িয়ে দিল আর সেলিম ওসমান সাহেব কিছুই বললেন না, ধিক্কার জানাই।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন বলেন, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির আগের কার্যালয়ের অংশটি কিনে নিয়েছিল। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর এই কার্যালয়টি আমরা আর ভাড়া পাইনি। ভাড়া পাইনি এটা ঠিকনা, বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান চাননি তার পরিবারের একটা সম্পদ একটা দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হোক। উনি অনেক চেষ্টা করছে আমরাও অনেক চেষ্টা করছি একটা দলীয় কার্যালয় ভাড়া নেয়ার জন্য। কিন্তু এটা বাস্তবিক সত্য যে কেউ দলীয় কার্যালয় ভাড়া দিতে চায়না। সেলিম ওসমান চাননা কোন রেলওয়ের সম্পত্তি, সরকারী সম্পত্তি, স্বায়ত্বশাসিত সম্পত্তিতে একটা দলীয় কার্যালয় গড়ে উঠুক। উনি চাচ্ছেন এটা প্লেইন একটা মালিকানা সম্পত্তি।

তিনি আরো বলেন, আমরা যেহেতু একটা দল করি সে হিসেবে আপনার এই ‘লাথি’ মারার কথায় আমরা অবশ্যই কষ্ট পেয়েছি। আপনার এই ভাষা ব্যবহার করা ঠিক হয়নি।

ভিপি বাদলকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগের লোক আওয়ামীলীগের নির্বাচন করবে। কিন্তু আওয়ামীলীগের লোক যদি জাতীয় পার্টির নির্বাচন করে এটা আমাদের ক্রেডিট।

শাহীন বলেন, মার্কা নির্ধারণ হয় উপর থেকে। আর মাহাজোটে থাকলে নারায়ণগঞ্জে লাঙ্গল দেয়া হবে এটাও আমরা জানি। যেকারণে আমাদের লাঙ্গলের মার্কা দাবি করার কিছু নেই। মহাজোটে থেকে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সামান্য অবদান থেকে থাকে এর বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা কি পাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ ও ৩ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ রয়েছে। আর বাকি তিনটা আসনে আমরা কি অবস্থায় আছি। এই তিনটা আসনে আমাদের এমপি একবারও ডাকে। কিন্তু আমরা আমাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আওয়ামীলীগকে টিকিয়ে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এখনো আওয়ামীলীগের কোন কর্মকান্ডে জোড়ালো তেমন কোন বিরোধীতা করিনা। আমাদের সমর্থনের কারণেই আওয়ামীলীগ সরকার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল। ২০০৬ সালের পরে আবার যদি বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসতো আওয়ামীলীগ সরকারের অস্তিত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো একমাত্র আল্লাহ মালুম। কিন্তু আমরা সেন্ট্রাল কিংবা লোকাল কোথাও সেভাবে মূল্যায়িত হইনা।

মাকসুদ চেয়ারম্যান সম্পর্কে বলেন, চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের অফিসে সরকার প্রধানের ছবি রাখতে পারবে। আমাদের দলে রাজাকারপুত্র রাজনীতি করতে পারবেনা গঠনতন্ত্রে এমনটি বলা নেই। দেশের সব দলই আমাদের দলে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সরকার যাদেরকে ব্যান করবে শুধু তারা রাজনীতি করতে পারবেনা। রাজাকারের এমন অনেক সন্তান আছে যারা আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে গেছে। তাছাড়া মাকসুদ একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান। একাত্তরের তার বাবার কর্মকা-ের কারণে এলাকার লোকজন কিন্তু তাকে বয়কট করে নাই। একাত্তরে এমন অনেকে আছে যারা তৎকালীন সরকারের পক্ষে গিয়েছে দেশের মানুষকে সেভ করতে। সবাই কিন্তু রাজাকার হয়ে দেশের ক্ষতি করে নাই। কিন্তু পরবর্তীতে আমরাই সেসব মানুষকে হত্যা করেছি শুধু নেতৃত্বের প্রশ্নে। অনেকেই আছে এলাকার জন্য কাজ করেছে। এখনো এলাকার মানুষ তাদের জন্য কাঁদে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগেও মাকসুদ কিন্তু চেয়ারম্যান ছিল। সরকার কিন্তু এই দায়ে তাকে ব্যান করতে পারতো। কিন্তু করেনি। তখন সে নির্দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করতে পারছে। কিন্তু এখন আমার দলের ব্যানারে নির্বাচন করছে তাই অপরাধ।


বিভাগ : টক শো


নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও