খোকার পেছনে অন্যরা : আরাফাত,অচিরে শোকজ উহ্য হবে : আরজু

স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:৩২ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

খোকার পেছনে অন্যরা : আরাফাত,অচিরে শোকজ উহ্য হবে : আরজু

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত বলেন, আওয়ামীলীগ কখনো অন্যায়কে সহ্য করেনা করবেও না। আমার নেতা আনোয়ার হোসেন এমপি খোকাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তার জায়গা থেকে। আমি তারা অন্যায় করে যাবে আমরা একটা মেনে নেবনা। আওয়ামীলীগের আঘাত হলে বসে থাকবোনা। আওয়ামীলীগের অনুভূমিকে আঘাত আনলে ছাড় নাই। একা হলে একাই প্রতিবাদ করবো।

১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে নিউজ নারায়ণগঞ্জের লাইভ টকশো ‘নারায়ণগঞ্জ কথন’ অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যে তারা একথা বলেন। আরিফ হোসাইন কনকের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত।

আরাফাত বলেন, এমপি খোকা জাতীয় পার্টির এমপি উনি এই কাজ করতে পারেনা। আওয়ামীলীগের মধ্যে চেইন আছে অন্য দলের মধ্যে চেইন আছে। চেইন সব দলের মধ্যে কাজ করে। এমপিদের মধ্যেও চেইন আছে। লিয়াকত হোসেন খোকার এই সাহস হয় নাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতির ফলক ভেঙে ফেলবেন। এটা কিছু একটা হয়েছে পেছন থেকে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদকে সোনারগাঁয়ে সমাহিত করার হয়েছে কারণ সেখানে আওয়ামীলীগের সাংসদ নেই। অথচ ওই লিয়াকত হোসেন খোকার জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দরা প্রতিবাদ সভা করেছে। সেখানে নেত্রীর সাথে (প্রধানমন্ত্রী) তার লাগানো ছবি করেছে। বঙ্গবন্ধু আর নেত্রীকে বিক্রি করেন আর বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ওইখানে দাফন করা হয় আপনি জানেন না? এসব বাহানা দিলে চলবেনা। এগুলো নেত্রীর কাছে সব রেকর্ড আছে।

তিনি আরো বলেন, সদরে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির স্তম্ভ ছিল। নাসিম ওসমানের পরবর্তীতে তার উত্তরসূরি সেলিম ওসমান এখানে এসেছে। কিন্তু খোকা তো স্তম্ভ না। নাসিম ওসমানের কর্মী ছিল লিয়াকত হোসেন খোকা। আজকে যদি নাসিম ওসমান থাকতো তাহলে তিনিই আজকে প্রতিবাদ করতো, সেখানে মাজেদের দাফন হবেনা। অথবা আওয়ামীলীগের এমপি থাকলেও প্রতিবাদ করতো।

জাপা নেতা রিপন ভাওয়ালের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোনারগাঁয়ের কায়সার হাসনাত ও কালামের ধাক্কা তো সামলাতে পারবেনা। নারায়ণগঞ্জের কথা বাদ দিলাম। এমন কোন হাত হয় নাই নারায়ণগঞ্জে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসবে। সে তো কিছুই না অন্য কেও না। এতো সাহস কারো হয় নাই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া বলেন, কোন কারণে ভুল করে শোকজের স্থলে জেলা কমিটি জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছে। জাহাঙ্গীরের ব্যাপারটা এখন স্যাটেল। এটা কোন অব্যাহতি হওয়ার রাস্তা নাই। একারণে জেলার নেতৃবৃন্দরা কেন্দ্রে গিয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে। গঠনতান্ত্রিকভাবে সবকিছু হবে। এখন কেন্দ্র থেকে শোকজ প্রত্যাহার করে দিয়ে দিবে। এতে করে জেলা আওয়ামীলীগের যারা তাকে শোকজ করেছে তাদের ইমেজ নষ্ট হবে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বলেন, এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার স্ত্রী ডালিয়া লিয়াকত আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পোস্টারিং করে। সেই পোস্টারে ফারুখ ভূইয়া সহ আরো অনেকের ছবি দিয়েছিল তাদের অনুমতি ছাড়া। এটা বলার ফলে এমপি খোকা তাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এছাড়া ফারুখ ভূইয়া সোনারগাঁও জি আর ইনিস্টিটিউশনের সভাপতি পদে আছে। ঘটনার দিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন নাম ফলক দেখে তিনি ক্ষেপে যান এবং তার নির্দেশে ফলক ভেঙে ফেলা হয়। উপজলার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমপিদের বেশ প্রভাব থাকে।

আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে জেলা আওয়ামীলীগ ও মহানগর আওয়ামীলীগ যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করে। একমাত্র এই জেলাতে সেই সমন্বয় নেই। এই সমন্বয়টা হওয়া দরকার।

এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে আসছিল।

গত ২১ নভেম্বর মহানগর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা। সেখানে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিল। ওই কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল।’ মূলত এ বক্তব্যের পরেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরের দিন জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্যে অনড় থাকলেও ২৩ নভেম্বর তিনি ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

অব্যাহতির ব্যাপারে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি গত ২১ তারিখ যে বক্তব্য দিয়েছি সেখানে স্লিপ অফ টাং একটা ভুল হয়েছে। বক্তব্যের উত্তেজনার মুহূর্তে আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা স্বপক্ষের দল বলার ক্ষেত্রে মুখ ফসকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে ফেলেছি। এটা বক্তব্যের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আর মানুষ মানুষকে ক্ষমা করবেনা। কিন্তু এরপরও আমি আজকে পত্রিকাগুলোতে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছি। লিখিত আকারে এই বিবৃতি দিয়েছি। অগঠনতন্ত্রভাবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সেক্রেটারী আমাকে অব্যাহতি দিতে পারেনা। এটা গঠনতন্ত্র বর্হিভূত কাজ হয়েছে।’ এই ঘটনার পরে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা কেন্দ্রে লিখিত ও মৌখিকভাবে নালিশ করে।


বিভাগ : টক শো


নিউজ নারায়ণগঞ্জ এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আরো খবর
এই বিভাগের আরও