জমির দাম বাড়ায় নারায়ণগঞ্জে মাঠ সংকট
স্টাফ করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ১০:২৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার

দেশের অন্যতম জনবহুল শহর নারায়ণগঞ্জে খেলার মাঠ দিনদিন কমে আসছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গা এবং সরকারি খাস জমি নিজেদের কাজের জন্য ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়ায় তৈরী হয়েছে এই সংকট।
শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন ভবন আর নাগরিক অবকাঠামো তৈরি করতে গিয়ে শহরের অনেক মাঠই বিলীন হওয়ার পথে। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, পাগলা, বন্দরসহ শহরের বাইরেও অনেক মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো অনুশীলন করা যায় না কুমুদিনী মাঠ, বিআইডব্লিউটিএর বরফকল মাঠ, ফতুল্লা ডিআইটি মাঠ, আলীগঞ্জের পিডাব্লিউডি মাঠ, আদমজী মাঠ ও চিত্তরঞ্জন মাঠে। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মাঠে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
চিত্তরঞ্জন কটন মিলের মাঠটি খেলায় মুখর থাকত একসময়। বিটিএমসি এ মাঠটি শিল্প প্লট হিসেবে বিক্রি করেছে। এর এক অংশে হয়েছে বনায়ন, তাই খেলার অপমৃত্যু।
মোনেম মুন্না, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, সম্রাট হোসেন এমিলি, জাকির হোসেন, গাউসের মত তারকা উঠে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ শরীফের মতো ক্রিকেটার এই জেলারই।
সেতারা বেগম, মাহমুদা শরীফ, রেহানা, দীন ইসলাম, এসএম ইসরাইল, সরদার ইদ্রিসের মতো সাঁতারু ছিল নারায়ণগঞ্জের। গ্রামের পুকুরে সাঁতার শিখে ঢাকার পুলে ঝড় তুলেছিলেন তাঁরা। তবে সেই পুকুরগুলোও ভরাট হয়ে যাওয়ায় সাঁতারু বেরিয়ে আসছে না আগের মতো।
তবে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ সংরক্ষণে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু।
১৬ জানুয়ারি শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জস্থান ফেসবুক গ্রুপের যৌথ আয়োজিত লাইভ টক শো ‘রেইজ অব নারায়ণগঞ্জ’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব বিষয়ে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি তানভীর আহমেদ টিটু। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অভিজিত সাহা।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়াতে আমরা কোথাও মাঠ পাচ্ছি না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার যতটুকু আছে সেটাকে নিজেদের মতো করে ফ্যাসিলেট করে যাচ্ছি। আনিসুর রহমান মিয়া (সাবেক জেলা প্রশাসক) যখন আমাদের জেলা প্রশাসক ছিলেন তখন এই বিষয়টি একটি মিটিংয়ে উঠে এসেছিল তখন আমরা তাঁকে জানাই যে খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। কারণ সরকারি জায়গা হয়তো দখলে চলে যাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে তাঁরা ব্যবহার করছে। এটাকে কিভাবে কি করা যায়। তখন তিনি এই ব্যাপারটিতে বিশেষ জোর দেন। আমার জানা মতে নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ৯টি খেলার মাঠকে সরকারি খাস জমির শ্রেণি থেকে খেলার মাঠ হিসেবে করে গেছেন। কারণ খাস জমি যে কেউ লিজ নিতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাশিপুরের হাটখোলা মাঠ।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটি স্টেডিয়াম পারিবারিক ভাবেই জোর চেষ্টা করছি সেটি হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জে। সেখানকার লোকজন আমার নানার নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করেছে। আমার মামারা এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যবসায়ী এবং সম্মানিত ব্যক্তিরা সবাই সহযোগীতা করে একটি নিচু জমিকে খেলার মাঠ করেছে। সেখানে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। এটিও সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের আওতায়। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করা হচ্ছে খেলার মাঠটুকু রেখে বাকিটুকু মন্ত্রণালয় যা করে করুক। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে প্রতিটি উপজেলা ভিত্তিক মাঠ হবে। সে হিসেবে ফতুল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ দুইটি জায়গাতেই উপজেলা ভিত্তিক খেলার মাঠ পাওয়ার কথা। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ওই মাঠটি সেখানে করার উদ্যোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে কুমুদীনির মাঠ ছিল। সেটা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি। যতদিন খালি ছিল ততদিন মাঠ ছিল। এখন তাঁরা নিয়ে নিয়েছে এখানে কিছু বলার নেই। এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি জেলা ক্রীড়া সংস্থার যতটুকু জায়গা আছে সেটাকে এমন ভাবে ফেসিলেট করা যেন এক মাঠের উপর নির্ভরশীল না হতে হয়। যেমন আমরা যদি ইনডোর করতে পারি একটা ফুটবল মাঠ, ক্রিকেট মাঠ থাকে তাহলে ক্রিকেট ফুটবল এবং ইনডোর যে কোনো একটি গেম খেলতে পারব। তাহলে বছরব্যাপী কিছু চলতে পারে। তাই আমরা কাঠামোগত উন্নয়নের দিকে জোড় দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ওসমানি পৌর স্টেডিয়াম যেটা আছে সেটাতে এখন ফুটবল খেলা হয়। আর সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের যে মাঠ সেটাতে ক্রিকেট খেলা হয়। আমি এতটুকু করতে পেরেছি যেন ক্রিটেক খেলা হলে ফুটবল বন্ধ রাখতে না হয় আর ফুটবল হলে যেন ক্রিকেট বন্ধ রাখতে না হয়। যেমন এখন ফুটবলের উদ্বোধন করেছি আবার ক্রিকেট টুর্নামেন্টও চলছে। দুই মাঠে দুই খেলা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘এতটুকুতে আমি সন্তুষ্ট না। আমার চাহিদা হচ্ছে সর্বোচ্চ লেভেলের ফেসিলেটি আমার নারায়ণগঞ্জে এবং আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই দুইটি ছাড়াও ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের পাশে যে পুকুর আছে সেটাকে ভরাট করে মাঠের প্রশস্ত আরো বৃদ্ধি করা হবে। সেখানেও ছোট ছোট আরো দুইটি খেলার মাঠ করা হবে। যারা কোনো ক্লাবের হয়ে অনুশীলন না করে লোকাল ভাবে খেলাধুলা করতে চায় তাঁদের জন্য সেই দুইটি মাঠ থাকবে। সেখানে তাঁরা সারাক্ষন খেলাধুলা করতে পারবে।