নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার কারিশমাটিক
স্পেশাল করেসপনডেন্ট || নিউজ নারায়ণগঞ্জ ০৯:৩৪ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

তানভীর আহমেদ টিটু। প্রচন্ড ক্রীড়া প্রেমী এবং একজন সফল সংগঠক। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তেমনি তাঁর সফল পরিচালনায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১২৭ বছরের পুরনো নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক থাকলেও রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। তেমনি ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি এবং জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির পদে থেকেও খেলার মাঠ ও খেলোয়ারদেরকে রেখেছেন রাজনীতির স্পর্শের বাইরে।
১৬ জানুয়ারি শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় নিউজ নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জস্থান ফেসবুক গ্রুপের যৌথ আয়োজিত লাইভ টক শো ‘রেইজ অব নারায়ণগঞ্জ’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নিজের জীবনের গল্প, বেড়ে ওঠা, রাজনীতি, খেলাধুলা নিয়ে তাঁর কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি তানভীর আহমেদ টিটু। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অভিজিত সাহা।
ডেভিডের বাসার স্মৃতি
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ডেভিড (যুবদলের সাবেক নেতা র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত) ভাইয়ের ছোটভাই মনা ছিল খেলোয়ার আমার বন্ধু। আমি সারাজীবন দেখেছি চাষাঢ়া এবং মিশনপাড়ার মধ্যে একটি যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল। প্রতিদিন একটি লড়াই না হলে দিনটা শেষ হচ্ছে না এমন মনে হতো। সেই সময় যখন চাষাঢ়ার কেউ মিশনপাড়ায় যেতো না বা চাষাঢ়ার কেউ মিশনপাড়ায় যেতো না আমি কিন্তু মিশনপাড়ায় ডেভিড ভাইয়ের বাসায় গিয়ে তাঁর বেড রুমের বারান্দায় যে দোলনা সেই বারান্দায় বসে মনার সঙ্গে আড্ডা মারতাম। আমি কিন্তু ওই সময়গুলা সেখানে আসা যাওয়া করেছি।’
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা!
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ওইভাবে হইনি। কারণ রাজনীতির সাথে আমার আগাগোড়া কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমার অনেক ফ্রেন্ড ছিল যারা প্লেয়ার ছিল। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি খেলাধুলার তখন যারা নাকি বিএনপির সাথে জড়িত কিন্তু খেলাধুলাতে তাঁদের সমর্থন থাকে। যেমন কাউন্সিলর খোরশেদ। সে কিন্তু আমার ক্লাসমেট আমার বন্ধু। আমি ওকে বলি যে তোমরা ইনভল্ভ হও। এমন যেন খেলাধুলার অঙ্গনে না হয় যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বিএনপির সব কোনঠাসা বের করে দিল। আবার বিএনপি আসলো আওয়ামী লীগের সবাইকে বের করে দিল। এরকম যেন না হয়। এটা হলে খেলোয়ারদের সমস্যা হয়। সো লেটস ওয়ার্ক টুগেদার। আামি যত ফ্রি ফ্র্যাংকলি ওদেরকে বলি ওরা আবার পলিটিক্যালি চিন্তা করে যে এটা করা ঠিক হবে কি না। দলের কোনো ভাবমূর্তি নষ্ট হবে কি না। হয়তো তাঁরা সেই চিন্তা করে অনেক সময় ওপেনলি আসতে পারে না। আমাকে বলে যে বন্ধু তুমি পারফেক্টলি এটা চালাচ্ছো তুমি চালাও আমি আছি পেছন থেকে। কারণ সামনে আসাটা এই মুহূর্তে ঠিক না। আমি সব সময় চেষ্টা করি যে আমাদের খেলাধুলার অঙ্গনটা যেন রাজনীতির টোটালি (সম্পূর্ণ) বাইরে থাকে। কারণ, আমি সব সময় বলি সাকিব আল হাসান যদি অন্য দল করে ওকে কি জাতীয় দল থেকে বাদ দিতে পারব? মুশফিক তামিমরা যদি বলে যে তাঁরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে না। তাহলে কি তাঁদেরকে টিম থেকে বাদ দেওয়া ঠিক হবে বা দেশের মানুষ মেনে নিবে?’
টিটু বলেন, ‘খেলোয়ারদের মধ্যে এমনটা হতে পারে যেমন মাশরাফি এখন সংসদ সদস্য হয়ে গেছে। কিন্তু একজন প্লেয়ার যখন সে খেলবে তখন সে দেশের সম্পদ। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যবসায়ীক দল বা কোনো দলের না। সে হচ্ছে বাংলাদেশের। কারণ সে বাংলাদেশের মানচিত্রটাকে ক্যারি (বহন) করে বিশ্ব ময়দানে। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভিন্ন দল বিভিন্ন মতের থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যখন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করব তখন আমি বাংলাদেশের। কে কোন দল করল আমি সেটা কখনই মাথায় নেই না। আমি পলিটিক্সটাকে আসতে দিতে চাই না।’
রিয়াজউদ্দিন আল মামুনকে অতিথি করায় সমালোচনার শিকার
টিটু আরো বলেন, ‘যখন আমাদের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান সাহেব জীবিত ছিলেন তখন ক্রিকেটের একটি অনুষ্ঠানে রিয়াজউদ্দিন আল মামুন ভাইকে চিফ গেস্ট করে এনেছিলাম। তাঁর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। যদিও তিনি বিএনপি ঘরোনা একজন শীর্ষ নেতার ক্লাসমেট বা ফ্রেন্ড। আমি কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানের চিফ গেস্ট করে নিয়ে এসেছিলাম। আমি তো চিন্তা করিনি যে তাঁকে নিয়ে আসলে কি হবে। এটা ছিল ২০০৯ এর ঘটনা। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো নাসিম ভাই এমপি হলেন। তাঁকে চিফ গেস্ট করে যখন অনুষ্ঠান করে দিলাম তারপর নারায়ণগঞ্জের লোকাল সব পত্রিকায় খুব ঘটা করে ভিন্ন ভাবে সেটাকে প্রেজেন্ট করা হলো। তখন খুব কষ্ট লেগেছিল যে আসলে আমি যে জিনিসটা চাই নাই। ভিন ভাবে যখন লেখাগুলো চলে এসেছে পারসেপশনটাকে টোটালি চেঞ্জ করে দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ওনাকে নিয়ে এসেছিলাম কারণ রিয়াজউদ্দিন মামুন ভাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ডোনেশন দেন। খেলোয়ারদের এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠক এবং সংগঠনকে হেল্প করেন তাঁর কোম্পানি থেকে। একজন খেলাধুলা পাগল মানুষ তিনি। উনি নারায়ণগঞ্জের সন্তান। কিন্তু আমরা ওনার কাছে যাইনি, চাইনি তাই পাইনি। কিন্তু ওইসময় আমাদের কাঠামোগত অবস্থান এত দুর্বল ছিল যে আমাদের দরকার ছিল এমন একজনের যে কিনা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সাপোর্ট করবে এবং তাঁকে দিয়ে অনেক হেল্প পাবো বা তাঁকে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাব। আমার চিন্তা ছিল প্লেয়ারদের জন্য ফেসিলিটিস কিভাবে ডেভেলপ করা যায়। কিন্তু আমাদের টোটাল ভিউসটাকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে পরের দিনের পত্রিকার ওই নিউজে। এর পরেই মামুন ভাই বললেন যে বাদ দাও। নারায়ণগঞ্জে গিয়ে এরকম অনুষ্ঠান করলে এরকম করে লেখালেখি হবে এরকম না করাই ভালো। আমিও তখন ধাক্কা খেয়ে শিখেছি যে যেটা করলে ভালোর থেকে খারাপ হবে সেটা না করাই ভালো। সেই কারণে রাজনীতিকে খেলার প্রাঙ্গন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি।’